জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট: পরীক্ষা মূল্য তালিকা ২০২৩
প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা-এর মতো একটি প্রতিষ্ঠানে চোখের পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা রাখা কেন এত জরুরি। বাংলাদেশে চোখের চিকিৎসার জন্য এটি একটি অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য এবং জনপ্রিয় ঠিকানা। এখানে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও অভিজ্ঞ ডাক্তারদের তত্ত্বাবধানে উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়।
মূল বিষয়গুলো এক নজরে
- জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা-তে চোখের পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী।
- বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য নির্দিষ্ট মূল্য তালিকা রয়েছে, যা হাসপাতালের ওয়েবসাইটে বা সরাসরি কাউন্টারে পাওয়া যায়।
- সাধারণ পরীক্ষা থেকে শুরু করে জটিল পরীক্ষা পর্যন্ত সবকিছুরই সুনির্দিষ্ট ফি নির্ধারণ করা আছে।
- সরকারি ছুটির দিন হাসপাতাল বন্ধ থাকে, তাই পরীক্ষা করানোর আগে কর্মদিবস জেনে যাওয়া ভালো।
- রোগীর অবস্থা ভেদে কিছু পরীক্ষার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ প্রয়োজন হতে পারে।
চোখের যত্নে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ভূমিকা
আপনি নিশ্চয়ই জানেন, চোখ আমাদের শরীরের সবচেয়ে মূল্যবান অঙ্গগুলোর একটি। তাই এর সঠিক যত্ন নেওয়া অপরিহার্য। জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা, বাংলাদেশের মানুষের চোখের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এক বিশাল ভূমিকা রাখছে। এখানে প্রতিদিন শত শত মানুষ চোখের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আসেন এবং সাশ্রয়ী মূল্যে উন্নত চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেন। বিশেষ করে, যারা স্বল্প আয়ের মানুষ, তাদের জন্য এটি এক আশীর্বাদস্বরূপ।
কেন এই হাসপাতালটি এত জনপ্রিয়?
এই হাসপাতালটি শুধু ঢাকার মানুষের কাছেই নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের কাছেও জনপ্রিয়। এর প্রধান কারণ হলো, এখানে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দল, আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং তুলনামূলকভাবে কম খরচে চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায়। আপনি যদি চোখের কোনো সমস্যায় ভোগেন, তবে এই হাসপাতালটি আপনার জন্য একটি নির্ভরযোগ্য বিকল্প হতে পারে।
জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা: পরীক্ষা ও মূল্য তালিকা
আপনার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে, এখানে কী কী ধরনের চোখের পরীক্ষা করানো যায় এবং সেগুলোর খরচ কেমন? চলুন, এই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। হাসপাতালের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফি সাধারণত সরকারি নিয়ম অনুযায়ী নির্ধারিত হয়, যা সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে থাকে।
সাধারণ চোখের পরীক্ষা
প্রাথমিকভাবে চোখের সমস্যা নির্ণয়ের জন্য কিছু সাধারণ পরীক্ষা করা হয়। এই পরীক্ষাগুলো তুলনামূলকভাবে কম খরচে করানো যায়।
দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা (Visual Acuity Test)
দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা চোখের একটি মৌলিক পরীক্ষা। এর মাধ্যমে আপনার দৃষ্টিশক্তি কতটা ভালো, তা পরিমাপ করা হয়। সাধারণত, একটি চার্ট ব্যবহার করে এই পরীক্ষা করা হয়। এর খরচ খুবই সামান্য, যা প্রায় ৫০-১০০ টাকার মধ্যে হতে পারে।
চোখের চাপ পরিমাপ (Tonometry)
গ্লুকোমা নির্ণয়ের জন্য চোখের চাপ পরিমাপ করা হয়। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা, যা চোখের ভেতরের চাপ পরিমাপ করে। এর খরচ প্রায় ১০০-২০০ টাকার মধ্যে হতে পারে।
রেটিনোস্কপি (Retinoscopy)
চোখের পাওয়ার নির্ণয়ের জন্য রেটিনোস্কপি একটি প্রচলিত পদ্ধতি। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে এটি বেশি ব্যবহৃত হয়। এর খরচও প্রায় ১০০-১৫০ টাকার কাছাকাছি।
বিশেষায়িত চোখের পরীক্ষা
কিছু বিশেষায়িত পরীক্ষা রয়েছে, যা নির্দিষ্ট কিছু চোখের রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজন হয়। এই পরীক্ষাগুলোর খরচ সাধারণ পরীক্ষার চেয়ে কিছুটা বেশি হতে পারে।
অপটিক্যাল কোহেরেন্স টোমোগ্রাফি (OCT)
চোখের রেটিনা এবং অপটিক নার্ভের বিস্তারিত চিত্র পাওয়ার জন্য OCT পরীক্ষা করা হয়। এটি গ্লুকোমা, ম্যাকুলার ডিজেনারেশন এবং ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির মতো রোগ নির্ণয়ে অত্যন্ত সহায়ক। এই পরীক্ষার খরচ সাধারণত ১০০০-২০০০ টাকার মধ্যে হতে পারে।

ফান্ডাস ফ্লুরেসিন এনজিওগ্রাফি (FFA)
চোখের রক্তনালীর অবস্থা পরীক্ষা করার জন্য FFA করা হয়। এটি ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি বা অন্যান্য রেটিনাল রোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এর খরচ প্রায় ২০০০-৩০০০ টাকার মতো হতে পারে।
কর্নিয়াল টপোগ্রাফি (Corneal Topography)
কর্নিয়ার আকৃতি এবং বক্রতা পরিমাপের জন্য কর্নিয়াল টপোগ্রাফি করা হয়। এটি ল্যাসিক সার্জারি বা কন্টাক্ট লেন্স ফিটিংয়ের আগে প্রয়োজন হয়। এই পরীক্ষার খরচ সাধারণত ৮০০-১৫০০ টাকার মধ্যে থাকে।
আল্ট্রাসাউন্ড বায়োমেট্রি (A-Scan Biometry)
ছানি অপারেশনের আগে চোখের লেন্সের পাওয়ার নির্ণয়ের জন্য A-Scan Biometry করা হয়। এর খরচ প্রায় ৫০০-১০০০ টাকার মতো।
জরুরি চোখের সেবা
যদি আপনার চোখে হঠাৎ কোনো সমস্যা হয়, যেমন – চোখে কিছু ঢুকে যাওয়া, আঘাত লাগা বা হঠাৎ দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, তাহলে এই হাসপাতালে জরুরি সেবাও পাওয়া যায়। জরুরি সেবার খরচ সাধারণ পরীক্ষার চেয়ে কিছুটা বেশি হতে পারে, তবে তা পরিস্থিতি ভেদে ভিন্ন হয়।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ অফথালমোলজি অ্যান্ড হসপিটাল, ঢাকা-তে চিকিৎসা গ্রহণের আগে কিছু বিষয় জেনে রাখা আপনার জন্য সহায়ক হবে।
কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন?

হাসপাতালে যাওয়ার সময় আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন সনদ সাথে রাখুন। এটি রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করবে। এছাড়াও, পূর্বে কোনো পরীক্ষা বা চিকিৎসার কাগজ থাকলে সেগুলোও নিয়ে যাওয়া ভালো।
কখন যাবেন?
হাসপাতাল সাধারণত সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তবে, জরুরি সেবা ২৪ ঘণ্টাই পাওয়া যায়। সরকারি ছুটির দিনে হাসপাতাল বন্ধ থাকে, তাই যাওয়ার আগে ছুটির তালিকা দেখে নিন।
ডাক্তারের পরামর্শ ফি
হাসপাতালে ওপিডি (আউটডোর পেশেন্ট ডিপার্টমেন্ট) তে ডাক্তারের পরামর্শ ফি সাধারণত ৫০-১০০ টাকার মধ্যে থাকে। তবে, ব্যক্তিগত চেম্বারে ডাক্তার দেখালে ফি ভিন্ন হতে পারে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs)
আপনার মনে জাগা কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর এখানে দেওয়া হলো।
জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা কি সরকারি হাসপাতাল?
হ্যাঁ, এটি একটি সরকারি হাসপাতাল। এটি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়।
এখানে কি চোখের অপারেশন করানো যায়?
অবশ্যই। এখানে ছানি অপারেশন, গ্লুকোমা অপারেশন, রেটিনাল সার্জারিসহ বিভিন্ন ধরনের চোখের অপারেশন অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে করা হয়।
হাসপাতালের ওয়েবসাইটে কি মূল্য তালিকা পাওয়া যায়?
অনেক সময় হাসপাতালের ওয়েবসাইটে মূল্য তালিকা সম্পূর্ণরূপে বিস্তারিত নাও থাকতে পারে। তবে, আপনি সরাসরি হাসপাতালে গিয়ে বা তাদের হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন।
বাইরে থেকে পরীক্ষা করিয়ে রিপোর্ট দেখালে কি খরচ কম হয়?
যদি আপনি বাইরে থেকে কোনো পরীক্ষা করিয়ে থাকেন এবং সেই রিপোর্ট নিয়ে হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে যান, তাহলে শুধু ডাক্তারের পরামর্শ ফি দিতে হবে। নতুন করে সেই পরীক্ষাগুলো করানোর প্রয়োজন হবে না, যদি না ডাক্তার মনে করেন যে নতুন করে পরীক্ষা করা দরকার।
শিশুদের চোখের চিকিৎসার জন্য কি এখানে বিশেষ ব্যবস্থা আছে?
হ্যাঁ, এখানে শিশুদের চোখের চিকিৎসার জন্য আলাদা বিভাগ এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছে। শিশুদের জন্য উপযোগী পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থাও এখানে আছে।
কীভাবে যাবেন?
জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা, শেরেবাংলা নগরের আগারগাঁও এলাকায় অবস্থিত। আপনি পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বা ব্যক্তিগত যানবাহনে সহজেই এখানে পৌঁছাতে পারবেন। ঢাকার যেকোনো প্রান্ত থেকে বাস, সিএনজি বা রাইডশেয়ারিং সার্ভিসের মাধ্যমে এখানে যাওয়া যায়।
আপনার চোখের সুরক্ষায় কিছু টিপস
চোখের যত্ন নেওয়া শুধু চিকিৎসার উপরই নির্ভরশীল নয়, বরং দৈনন্দিন কিছু অভ্যাসও চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
নিয়মিত চোখের পরীক্ষা
বিশেষ করে ৪০ বছর বয়সের পর বছরে অন্তত একবার চোখের পরীক্ষা করানো উচিত। যদি আপনার ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের মতো কোনো রোগ থাকে, তবে আরও ঘন ঘন পরীক্ষা করানো প্রয়োজন।
পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ
ভিটামিন এ, সি, ই এবং জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবার চোখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। গাজর, সবুজ শাক-সবজি, কমলালেবু, বাদাম ইত্যাদি আপনার খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন।
স্ক্রিন টাইম কমানো
দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটার, মোবাইল বা ট্যাবলেটের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখের উপর চাপ পড়ে। প্রতি ২০ মিনিট পর পর ২০ সেকেন্ডের জন্য ২০ ফুট দূরের কোনো বস্তুর দিকে তাকান।
চোখের সুরক্ষা
বাইরে বের হলে সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি থেকে চোখকে রক্ষা করার জন্য সানগ্লাস ব্যবহার করুন। ধুলোবালি বা রাসায়নিক পদার্থের কাজ করার সময় সুরক্ষামূলক চশমা পরা উচিত।
পর্যাপ্ত ঘুম
ঘুম চোখের বিশ্রামের জন্য অপরিহার্য। পর্যাপ্ত ঘুম চোখের ক্লান্তি দূর করে এবং চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
আশা করি, এই তথ্যগুলো আপনার জন্য সহায়ক হবে। আপনার চোখের যত্ন নিন, কারণ চোখ অমূল্য!
