NITTH ঢাকা: পরীক্ষার মূল্য তালিকা ও জরুরি তথ্য

Key Takeaways

  • বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, যা এনআইটিটিএইচ (NITTH) নামেই বেশি পরিচিত, বাংলাদেশের ফুসফুস ও বক্ষ সংক্রান্ত রোগের চিকিৎসায় একটি নির্ভরযোগ্য নাম। এখানে উন্নত মানের চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুবিধা রয়েছে।
  • এখানে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা যেমন, এক্স-রে, সিটি স্ক্যান, রক্ত পরীক্ষা, ফুসফুসের কার্যকারিতা পরীক্ষা (PFT), ব্রঙ্কোস্কোপি, ইত্যাদি করানো হয়।
  • হাসপাতালের পরীক্ষার খরচ সাধারণত সাশ্রয়ী হয়, যা সাধারণ মানুষের জন্য সুবিধাজনক।
  • পরীক্ষার মূল্য তালিকা সম্পর্কে জানতে সরাসরি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা সবচেয়ে ভালো উপায়।
  • গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার জন্য আগে থেকে বুকিং বা অ্যাপয়েন্টমেন্টের প্রয়োজন হতে পারে।

আপনি কি শ্বাসকষ্ট, কাশি বা ফুসফুসের কোনো সমস্যা নিয়ে চিন্তিত? তাহলে বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, যা ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ থোরাসিক ডিজিজেস এন্ড হসপিটাল (NITTH) নামেই বেশি পরিচিত, আপনার জন্য একটি ভরসার জায়গা। ঢাকার এই বিশেষায়িত হাসপাতালটি ফুসফুস ও বক্ষ সংক্রান্ত রোগের চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা নিয়ে কাজ করছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এখানে বিভিন্ন পরীক্ষার খরচ কেমন? চলুন, আজ আমরা এনআইটিটিএইচ (NITTH) ঢাকা টেস্ট প্রাইস লিস্ট নিয়ে বিস্তারিত জেনে নিই, যাতে আপনার মনে কোনো দ্বিধা না থাকে!

এনআইটিটিএইচ (NITTH) এ কী কী পরীক্ষা করানো হয়?

বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ফুসফুসের বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ের জন্য অত্যাধুনিক সব পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা রেখেছে। এখানে কেবল সাধারণ ল্যাব টেস্টই নয়, বরং ফুসফুসের জটিল রোগ নির্ণয়ের জন্য বিশেষায়িত পরীক্ষাও করা হয়। আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরীক্ষাগুলো বেছে নিতে পারবেন।

সাধারণ ল্যাব পরীক্ষা

সাধারণ ল্যাব পরীক্ষাগুলো রোগ নির্ণয়ের প্রাথমিক ধাপ। এগুলোর মাধ্যমে শরীরের সামগ্রিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

রক্ত পরীক্ষা

রক্ত পরীক্ষা শরীরের ভেতরের অনেক তথ্য উন্মোচন করে। যেমন, সিবিসি (Complete Blood Count), ইএসআর (Erythrocyte Sedimentation Rate) এবং অন্যান্য বায়োকেমিক্যাল পরীক্ষা এখানে করা হয়। এই পরীক্ষাগুলো ইনফেকশন বা প্রদাহের মাত্রা বুঝতে সাহায্য করে।

প্রস্রাব পরীক্ষা

ইউরিন রুটিন মাইক্রোস্কোপিক এক্সামিনেশন (Urine R/M/E) এবং অন্যান্য ইউরিন কালচার টেস্ট এখানে করা হয়। এটি কিডনি এবং মূত্রনালীর স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা দেয়।

ইমেজিং পরীক্ষা

বক্ষব্যাধি হাসপাতালে ফুসফুসের ভেতরের ছবি দেখতে বিভিন্ন ইমেজিং পরীক্ষা করানো হয়। এগুলো রোগ নির্ণয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

বুকের এক্স-রে (Chest X-ray)

এটি ফুসফুসের সাধারণ কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পরীক্ষা। বুকের এক্স-রে এর মাধ্যমে নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা, ফুসফুসের ক্যান্সার, বা অন্য কোনো অস্বাভাবিকতা সহজেই ধরা পড়ে। এর খরচ সাধারণত বেশ সাশ্রয়ী হয়।

সিটি স্ক্যান (CT Scan)

ফুসফুসের আরও বিস্তারিত চিত্র পেতে সিটি স্ক্যান করা হয়। এটি থ্রি-ডি ছবি তৈরি করে, যা এক্স-রের চেয়েও বেশি তথ্য দেয়। ফুসফুসের টিউমার, সিস্ট, বা জটিল ইনফেকশন নির্ণয়ে এটি অপরিহার্য। এর খরচ এক্স-রের চেয়ে বেশি হলেও, এটি অনেক সময় জীবন রক্ষাকারী তথ্য প্রদান করে।

আল্ট্রাসনোগ্রাফি (Ultrasonography)

বুকের আল্ট্রাসনোগ্রাফি ফুসফুসের চারপাশে জমে থাকা তরল বা প্লুরাল ইফিউশন নির্ণয়ে সাহায্য করে। এটি একটি নিরাপদ এবং ব্যথামুক্ত পরীক্ষা।

ফুসফুসের কার্যকারিতা পরীক্ষা (PFT – Pulmonary Function Test)

Google Image

ফুসফুসের কার্যকারিতা পরীক্ষা ফুসফুস কতটা ভালো কাজ করছে তা পরিমাপ করে। এটি অ্যাজমা, সিওপিডি (COPD) এবং অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের রোগ নির্ণয়ে খুবই কার্যকর।

স্পাইরোমেট্রি (Spirometry)

স্পাইরোমেট্রি হলো PFT এর সবচেয়ে সাধারণ পরীক্ষা। এটি ফুসফুসে কতটুকু বাতাস প্রবেশ করছে এবং বের হচ্ছে, তার গতি পরিমাপ করে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে ফুসফুসের সংকোচনশীলতা এবং বায়ুপ্রবাহের প্রতিবন্ধকতা বোঝা যায়।

ফুসফুসের ভলিউম পরীক্ষা (Lung Volume Test)

এই পরীক্ষাটি ফুসফুসের মোট ধারণক্ষমতা পরিমাপ করে। এটি ফুসফুসের সীমাবদ্ধতা বা বাধাগ্রস্ততা বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

এন্ডোস্কোপিক পরীক্ষা

কিছু জটিল রোগ নির্ণয়ের জন্য এন্ডোস্কোপিক পরীক্ষার প্রয়োজন হয়।

ব্রঙ্কোস্কোপি (Bronchoscopy)

ব্রঙ্কোস্কোপি হলো একটি নমনীয় নল (ব্রঙ্কোস্কোপ) ব্যবহার করে শ্বাসনালীর ভেতরের অংশ পরীক্ষা করা। এর মাধ্যমে বায়োপসি বা টিস্যুর নমুনা সংগ্রহ করা যায়, যা ফুসফুসের ক্যান্সার বা অন্যান্য গুরুতর রোগ নির্ণয়ে সহায়ক। এই পরীক্ষাটি সাধারণত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা সম্পাদিত হয় এবং এর খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি হয়।

এনআইটিটিএইচ (NITTH) ঢাকা টেস্ট প্রাইস লিস্ট: একটি ধারণা

বক্ষব্যাধি হাসপাতালের পরীক্ষার খরচ সাধারণত সরকারি নিয়ম অনুযায়ী নির্ধারিত হয় এবং এটি অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতালের তুলনায় বেশ সাশ্রয়ী। তবে, নির্দিষ্ট পরীক্ষার খরচ জানতে সরাসরি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা সবচেয়ে ভালো। এখানে আমরা একটি সম্ভাব্য ধারণা দিচ্ছি।

Google Image

টেবিল: এনআইটিটিএইচ (NITTH) এর কিছু সম্ভাব্য পরীক্ষার মূল্য তালিকা (আনুমানিক)

পরীক্ষার নাম আনুমানিক মূল্য (BDT)
চেস্ট এক্স-রে (PA View) ৩০০ – ৫০০
সিবিসি (CBC) ২৫০ – ৪০০
ইএসআর (ESR) ১৫০ – ২৫০
ইউরিন আর/এম/ই (Urine R/M/E) ১৫০ – ২৫০
স্পাইরোমেট্রি (PFT) ৮০০ – ১২০০
ব্রঙ্কোস্কোপি (সাধারণ) ৪০০০ – ৬০০০
সিটি স্ক্যান (চেস্ট) ৩০০০ – ৫০০০
আল্ট্রাসনোগ্রাফি (চেস্ট) ৭০০ – ১০০০

দ্রষ্টব্য: এই মূল্য তালিকাটি শুধুমাত্র একটি আনুমানিক ধারণা। প্রকৃত মূল্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দ্বারা নির্ধারিত হবে এবং যেকোনো সময় পরিবর্তন হতে পারে।

কীভাবে পরীক্ষার খরচ সম্পর্কে নিশ্চিত হবেন?

পরীক্ষার সঠিক খরচ এবং অন্যান্য তথ্য জানতে, আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে সরাসরি এনআইটিটিএইচ (NITTH) এর কাউন্টারে যোগাযোগ করা অথবা তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে (যদি থাকে) ভিজিট করা। অনেক সময় পরীক্ষার খরচ রোগের জটিলতা বা ব্যবহৃত উপকরণের ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।

এনআইটিটিএইচ (NITTH) এ পরীক্ষা করানোর সুবিধা

বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, বাংলাদেশের বক্ষব্যাধি চিকিৎসায় একটি পথিকৃৎ প্রতিষ্ঠান। এখানে পরীক্ষা করানোর বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে।

অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও টেকনিশিয়ান

এখানে অত্যন্ত অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও টেকনিশিয়ানরা কাজ করেন, যারা ফুসফুস রোগের চিকিৎসায় পারদর্শী। তাদের হাতে আপনার পরীক্ষা নির্ভুলভাবে সম্পন্ন হবে।

Google Image

আধুনিক যন্ত্রপাতি

হাসপাতালটিতে আধুনিক ও উন্নত মানের যন্ত্রপাতির ব্যবহার করা হয়, যা সঠিক রোগ নির্ণয়ে সহায়তা করে।

সাশ্রয়ী মূল্যে চিকিৎসা

সরকারি হাসপাতাল হওয়ায়, এখানে পরীক্ষার খরচ বেসরকারি হাসপাতালের তুলনায় অনেক কম। এটি সাধারণ মানুষের জন্য একটি বড় সুবিধা।

বিশেষায়িত সেবা

যেহেতু এটি একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল, তাই ফুসফুস ও বক্ষ সংক্রান্ত যেকোনো জটিল রোগের জন্য এখানে উন্নত মানের চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুবিধা রয়েছে।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs)

বক্ষব্যাধি হাসপাতাল সম্পর্কে মানুষের মনে কিছু সাধারণ প্রশ্ন থাকে। চলুন, সেগুলোর উত্তর জেনে নিই।

বক্ষব্যাধি হাসপাতালের ঠিকানা কি?

বক্ষব্যাধি হাসপাতালের পুরো নাম হলো ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ থোরাসিক ডিজিজেস এন্ড হসপিটাল (NITTH)। এটি ঢাকার মহাখালীতে অবস্থিত।

বক্ষব্যাধি হাসপাতালের ডাক্তার দেখানোর নিয়ম কি?

এখানে ডাক্তার দেখাতে হলে সাধারণত হাসপাতালের নির্দিষ্ট কাউন্টারে টিকিট কেটে সিরিয়াল নিতে হয়। অনেক সময় আগে থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়ারও ব্যবস্থা থাকে। বিস্তারিত তথ্যের জন্য হাসপাতালের হেল্পলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

বক্ষব্যাধি হাসপাতালের হেল্পলাইন নম্বর আছে কি?

হ্যাঁ, বক্ষব্যাধি হাসপাতালের হেল্পলাইন নম্বর রয়েছে। সঠিক এবং হালনাগাদ তথ্যের জন্য তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ভিজিট করা বা সরাসরি তাদের সাথে যোগাযোগ করা ভালো।

বক্ষব্যাধি হাসপাতালে কি ফুসফুসের ক্যান্সারের চিকিৎসা হয়?

হ্যাঁ, বক্ষব্যাধি হাসপাতালে ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রাথমিক নির্ণয় এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। ব্রঙ্কোস্কোপি, বায়োপসি এবং অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ক্যান্সার নির্ণয় করা হয় এবং চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করা হয়।

বক্ষব্যাধি হাসপাতালে যক্ষ্মার (TB) চিকিৎসা কি বিনামূল্যে হয়?

জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় যক্ষ্মার রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা সাধারণত বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে প্রদান করা হয়। বক্ষব্যাধি হাসপাতাল এই কর্মসূচির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

বক্ষব্যাধি হাসপাতালে কি জরুরি সেবা পাওয়া যায়?

হ্যাঁ, বক্ষব্যাধি হাসপাতালে শ্বাসকষ্ট বা ফুসফুসের জরুরি অবস্থার জন্য জরুরি সেবা (Emergency Service) পাওয়া যায়। যেকোনো গুরুতর পরিস্থিতিতে এখানে দ্রুত চিকিৎসা সহায়তা গ্রহণ করা সম্ভব।

পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে কত সময় লাগে?

পরীক্ষার ধরনের ওপর নির্ভর করে রিপোর্ট পেতে ভিন্ন ভিন্ন সময় লাগতে পারে। যেমন, সাধারণ রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট সাধারণত কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাওয়া যায়, কিন্তু সিটি স্ক্যান বা ব্রঙ্কোস্কোপির মতো জটিল পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে কয়েক দিন সময় লাগতে পারে। রিপোর্ট সংগ্রহের সঠিক সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আপনাকে জানিয়ে দেবে।

বক্ষব্যাধি হাসপাতাল (NITTH) ঢাকার ফুসফুস রোগের চিকিৎসায় একটি নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান। আশা করি, এই বিস্তারিত তথ্য আপনার জন্য সহায়ক হবে। আপনার বা আপনার প্রিয়জনের সুস্থতা আমাদের কাম্য!

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *