NILMRC টেস্ট প্রাইস লিস্ট: সাশ্রয়ী মূল্যে ল্যাব টেস্ট করুন

কী-টেকওয়েস (Key Takeaways)

  • সুলভ ও মানসম্পন্ন ল্যাব পরীক্ষা: এনআইএলএমআরসি (NILMRC) স্বল্পমূল্যে আন্তর্জাতিক মানের ল্যাব পরীক্ষা পরিষেবা প্রদান করে, যা সাধারণ মানুষের জন্য সাশ্রয়ী।
  • বিস্তৃত পরীক্ষার তালিকা: প্যাথলজি, মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, ইমিউনোলজি সহ বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা এখানে করানো যায়।
  • স্বচ্ছ মূল্য তালিকা: এনআইএলএমআরসি-এর ওয়েবসাইটে এবং সরাসরি কেন্দ্রে সকল পরীক্ষার মূল্য তালিকা স্বচ্ছভাবে দেওয়া আছে। এতে কোনো লুকোচুরি থাকে না।
  • আধুনিক প্রযুক্তি ও বিশেষজ্ঞ দল: অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি এবং অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে নির্ভুল পরীক্ষার ফলাফল নিশ্চিত করা হয়।
  • রেফারেল সুবিধা: দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে রোগীরা রেফারেলের মাধ্যমে এখানে উন্নত চিকিৎসা ও পরীক্ষা করাতে পারেন।

আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন, বাংলাদেশে মানসম্পন্ন ল্যাব টেস্ট করানো কতটা সহজ বা সাশ্রয়ী হতে পারে? স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে সঠিক রোগ নির্ণয় অত্যন্ত জরুরি। আর এই নির্ণয়ের অন্যতম ভিত্তি হলো ল্যাবরেটরি পরীক্ষা। কিন্তু অনেক সময়ই পরীক্ষার উচ্চমূল্য সাধারণ মানুষের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টার (NILMRC) এই দুশ্চিন্তা অনেকটাই দূর করেছে।

এনআইএলএমআরসি (NILMRC) কী এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টার (NILMRC) হলো বাংলাদেশের একটি বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান, যা ল্যাবরেটরি পরীক্ষার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে থাকে। এটি শুধু একটি পরীক্ষা কেন্দ্র নয়, এটি একটি রেফারেল সেন্টারও বটে। এর মানে হলো, দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে রোগীরা জটিল রোগ নির্ণয় বা নির্দিষ্ট পরীক্ষার জন্য এখানে রেফার হয়ে আসতে পারেন। এটি ঢাকার শেরে বাংলা নগরে অবস্থিত, যা এটিকে সহজে প্রবেশযোগ্য করে তোলে।

এনআইএলএমআরসি-এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

এনআইএলএমআরসি-এর প্রধান লক্ষ্য হলো সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্পন্ন ল্যাবরেটরি পরিষেবা নিশ্চিত করা। এটি গবেষণার মাধ্যমে নতুন রোগ নির্ণয় পদ্ধতি উদ্ভাবন এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণেও সহায়তা করে। এটি সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়, যা এর নির্ভরযোগ্যতা বাড়ায়।

এনআইএলএমআরসি টেস্ট প্রাইস লিস্ট: আপনার যা জানা দরকার

আপনি যদি এনআইএলএমআরসি-তে কোনো পরীক্ষা করানোর কথা ভাবছেন, তাহলে প্রথমেই আপনার মনে প্রশ্ন আসবে, "এখানে পরীক্ষার খরচ কেমন?" এনআইএলএমআরসি তাদের মূল্য তালিকা নিয়ে খুবই স্বচ্ছ। আপনি তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে অথবা সরাসরি কেন্দ্রে গিয়ে সকল পরীক্ষার বিস্তারিত মূল্য তালিকা দেখতে পারবেন। এটি আপনাকে আগে থেকেই বাজেট পরিকল্পনা করতে সাহায্য করবে।

সাধারণ কিছু পরীক্ষার মূল্য তালিকা কেমন?

এনআইএলএমআরসি-তে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা করানো হয়। এর মধ্যে রয়েছে রুটিন ব্লাড টেস্ট, ইউরিন টেস্ট, হরমোন পরীক্ষা, ক্যান্সারের স্ক্রিনিং, এবং আরও অনেক বিশেষায়িত পরীক্ষা। সাধারণত, এখানে পরীক্ষার মূল্য অন্যান্য বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তুলনায় বেশ কম। উদাহরণস্বরূপ, একটি সাধারণ CBC (Complete Blood Count) টেস্টের খরচ ৩০০-৪০০ টাকার মধ্যে হতে পারে, যেখানে অন্যান্য স্থানে এটি ৫০০-৭০০ টাকা বা তার বেশি নিতে পারে।

কিছু সাধারণ পরীক্ষার আনুমানিক মূল্য তালিকা:

পরীক্ষার নাম আনুমানিক মূল্য (টাকায়)
CBC ৩০০-৪০০
Urine R/M ২০০-৩০০
Blood Sugar ১০০-১৫০
Serum Creatinine ২৫০-৩৫০
Liver Function Test (LFT) ৬০০-৮০০
Kidney Function Test (KFT) ৫০০-৭০০
Thyroid Stimulating Hormone (TSH) ৫০০-৭০০
HBsAg ৩০০-৪০০
HIV Screening ৫০০-৭০০

দ্রষ্টব্য: এই মূল্য তালিকা শুধুমাত্র একটি ধারণা দেওয়ার জন্য। সঠিক এবং আপডেটেড মূল্য জানার জন্য অনুগ্রহ করে এনআইএলএমআরসি-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট অথবা সরাসরি তাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

এনআইএলএমআরসি-তে কী কী ধরনের পরীক্ষা করানো হয়?

এনআইএলএমআরসি একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি ল্যাবরেটরি। এখানে বিভিন্ন বিভাগের অধীনে পরীক্ষা করানো হয়। এতে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী যেকোনো পরীক্ষা বেছে নিতে সুবিধা হবে।

Google Image

প্যাথলজি বিভাগ

প্যাথলজি বিভাগে রক্ত, প্রস্রাব, মল এবং শরীরের অন্যান্য তরল পদার্থের পরীক্ষা করা হয়। এটি রোগের কারণ এবং প্রকৃতি নির্ণয়ে সহায়তা করে।

মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ

এই বিভাগে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক এবং পরজীবী সংক্রমণ নির্ণয় করা হয়। এটি সংক্রামক রোগের চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগ

বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগে শরীরের রাসায়নিক উপাদান যেমন গ্লুকোজ, কোলেস্টেরল, এনজাইম এবং হরমোনের মাত্রা পরিমাপ করা হয়।

ইমিউনোলজি বিভাগ

ইমিউনোলজি বিভাগ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং অ্যালার্জি সংক্রান্ত পরীক্ষা করে।

মলিকুলার বায়োলজি বিভাগ

Google Image

এই বিভাগটি ডিএনএ এবং আরএনএ ভিত্তিক পরীক্ষা করে, যা জেনেটিক রোগ এবং কিছু সংক্রামক রোগ নির্ণয়ে অত্যাধুনিক ভূমিকা রাখে।

এনআইএলএমআরসি কি সরকারি হাসপাতাল?

হ্যাঁ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টার (NILMRC) একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। এটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়। সরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এর মূল লক্ষ্য মুনাফা অর্জন নয়, বরং দেশের সাধারণ মানুষকে সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা।

এনআইএলএমআরসি-তে টেস্ট করার নিয়ম কী?

এনআইএলএমআরসি-তে টেস্ট করানো বেশ সহজ এবং সুসংগঠিত। আপনি কয়েকটি সহজ ধাপে আপনার পরীক্ষা করাতে পারবেন।

১. রেজিস্ট্রেশন

প্রথমে আপনাকে রেজিস্ট্রেশন কাউন্টারে গিয়ে একটি রেজিস্ট্রেশন ফর্ম পূরণ করতে হবে। এখানে আপনার নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর এবং পরীক্ষার নাম উল্লেখ করতে হবে।

২. ফি জমা দেওয়া

রেজিস্ট্রেশনের পর আপনাকে নির্ধারিত পরীক্ষার ফি জমা দিতে হবে। কাউন্টারে নগদ টাকা অথবা ডেবিট/ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্টের সুযোগ থাকতে পারে।

Google Image

৩. নমুনা সংগ্রহ

ফি জমা দেওয়ার পর আপনাকে নমুনা সংগ্রহের নির্দিষ্ট রুমে যেতে হবে। এখানে অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ানরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে আপনার রক্ত, প্রস্রাব বা অন্যান্য নমুনা সংগ্রহ করবেন।

৪. রিপোর্ট সংগ্রহ

সাধারণত, পরীক্ষার ধরন অনুযায়ী রিপোর্ট পেতে কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন সময় লাগতে পারে। রিপোর্ট সংগ্রহের জন্য আপনাকে একটি নির্দিষ্ট তারিখ ও সময় জানিয়ে দেওয়া হবে। রিপোর্ট অনলাইন বা সরাসরি কেন্দ্র থেকে সংগ্রহ করা যেতে পারে।

এনআইএলএমআরসি কি শুধু রেফারেল গ্রহণ করে?

না, এনআইএলএমআরসি শুধু রেফারেল গ্রহণ করে না। যদিও এটি একটি রেফারেল সেন্টার, তবে সাধারণ রোগীরাও সরাসরি এখানে এসে পরীক্ষা করাতে পারেন। একজন ডাক্তার যদি আপনাকে কোনো নির্দিষ্ট পরীক্ষার জন্য রেফার করেন, তাহলে প্রক্রিয়াটি আরও সহজ হয়। তবে, রেফারেল ছাড়া গেলেও আপনি প্রয়োজনীয় পরীক্ষাগুলো করাতে পারবেন।

এনআইএলএমআরসি-এর রিপোর্ট কি নির্ভরযোগ্য?

অবশ্যই! এনআইএলএমআরসি-এর রিপোর্ট অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য। এর কয়েকটি কারণ রয়েছে:

  • আধুনিক যন্ত্রপাতি: এনআইএলএমআরসি অত্যাধুনিক এবং স্বয়ংক্রিয় ল্যাবরেটরি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে, যা নির্ভুল ফলাফল নিশ্চিত করে।
  • অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ দল: এখানে অভিজ্ঞ প্যাথলজিস্ট, মাইক্রোবায়োলজিস্ট, বায়োকেমিস্ট এবং টেকনিশিয়ানরা কাজ করেন, যারা তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে উচ্চ প্রশিক্ষিত।
  • মান নিয়ন্ত্রণ: প্রতিষ্ঠানটি নিয়মিতভাবে অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক মান নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়, যা তাদের পরীক্ষার ফলাফলের নির্ভুলতা বজায় রাখে।
  • সরকারি তত্ত্বাবধান: সরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এর উপর কঠোর নজরদারি এবং জবাবদিহিতা থাকে, যা এর সেবার মান উন্নত রাখতে সাহায্য করে।

এনআইএলএমআরসি-এর সুবিধা এবং অসুবিধা কী?

যেকোনো প্রতিষ্ঠানের মতোই, এনআইএলএমআরসি-এর কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে।

সুবিধা:

  • সাশ্রয়ী মূল্য: এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে সাশ্রয়ী ল্যাবরেটরিগুলোর মধ্যে একটি, যা সাধারণ মানুষের জন্য খুবই উপকারী।
  • উচ্চ মান: কম মূল্য সত্ত্বেও, এনআইএলএমআরসি পরীক্ষার মানের সাথে আপস করে না। আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা হয়।
  • বিস্তৃত পরীক্ষার পরিসর: এখানে প্রায় সব ধরনের ল্যাবরেটরি পরীক্ষা করানো যায়।
  • বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধান: অভিজ্ঞ এবং দক্ষ চিকিৎসক ও টেকনিশিয়ানদের তত্ত্বাবধানে পরীক্ষা করা হয়।
  • সহজ প্রবেশগম্যতা: ঢাকার কেন্দ্রে অবস্থিত হওয়ায় এটি অনেকের জন্য সহজেই প্রবেশযোগ্য।

অসুবিধা:

  • ভিড়: যেহেতু এটি একটি জনপ্রিয় এবং সাশ্রয়ী প্রতিষ্ঠান, তাই এখানে কিছুটা ভিড় থাকতে পারে, বিশেষ করে সকালের দিকে।
  • সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া: কিছু পরীক্ষার জন্য রিপোর্ট পেতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।
  • সীমিত পার্কিং: যারা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে আসেন, তাদের জন্য পার্কিং একটি সমস্যা হতে পারে।

এনআইএলএমআরসি কি অনলাইনে রিপোর্ট দেয়?

হ্যাঁ, এনআইএলএমআরসি বর্তমানে তাদের কিছু পরীক্ষার রিপোর্ট অনলাইনে দেখার বা ডাউনলোড করার সুবিধা প্রদান করে থাকে। আপনার পরীক্ষার সময় আপনাকে একটি নির্দিষ্ট ওয়েব ঠিকানা এবং একটি ইউনিক আইডি বা রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেওয়া হবে, যা ব্যবহার করে আপনি অনলাইনে আপনার রিপোর্ট দেখতে পারবেন। এটি রোগীদের জন্য একটি দারুণ সুবিধা, কারণ এতে রিপোর্ট সংগ্রহের জন্য বারবার কেন্দ্রে আসার প্রয়োজন হয় না। তবে, সকল রিপোর্ট অনলাইনে নাও পাওয়া যেতে পারে, তাই রিপোর্ট সংগ্রহের সময় এই বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে নেওয়া ভালো।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *