IVU টেস্ট কীভাবে করা হয়: কিডনি পরীক্ষার প্রক্রিয়া
কিডনি আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। শরীরকে সুস্থ রাখতে কিডনির সঠিক কার্যকলাপ বজায় রাখা জরুরি। কিন্তু কিডনিতে কোনো সমস্যা হলে, তা ধরা পড়ে অনেক দেরিতে। তাই নিয়মিত কিডনির পরীক্ষা করানো প্রয়োজন। IVU (Intravenous Urography) টেস্ট হল তেমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা, যা কিডনির কার্যকারিতা এবং গঠন সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে। আজকের ব্লগ পোস্টে আমরা আলোচনা করব IVU টেস্ট কী, কেন করা হয় এবং এই পরীক্ষার পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে।
শরীরের অন্দরে কী চলছে, তা জানার জন্য IVU টেস্ট একটি অত্যন্ত দরকারি উপায়। তাহলে চলুন, আর দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক IVU টেস্টের খুঁটিনাটি।
IVU টেস্ট কী?
IVU, অর্থাৎ ইন্ট্রাভেনাস ইউরোগ্রাফি (Intravenous Urography), হল একটি বিশেষ ধরনের এক্স-রে পরীক্ষা। এই পরীক্ষার মাধ্যমে কিডনি, মূত্রনালী (ureter) এবং মূত্রাশয় (urinary bladder) -এর ছবি তোলা হয়। IVU টেস্টকে ইন্ট্রাভেনাস পাইলোগ্রাম (Intravenous Pyelogram) বা আইভিপি (IVP) নামেও ডাকা হয়।
এই পরীক্ষায় রোগীর শরীরে একটি বিশেষ ডাই (dye) বা কনট্রাস্ট মিডিয়া (contrast media) শিরার মাধ্যমে প্রবেশ করানো হয়। এই ডাই কিডনির মাধ্যমে ফিল্টার হয়ে মূত্রনালী দিয়ে মূত্রাশয়ে পৌঁছায়। এরপর এক্স-রে মেশিনের সাহায্যে কিডনি, মূত্রনালী ও মূত্রাশয়ের ছবি নেওয়া হয়। এই ছবিগুলির মাধ্যমে কিডনির আকার, আকৃতি, অবস্থান এবং কোনো প্রকার ব্লকেজ বা অস্বাভাবিকতা আছে কিনা, তা বোঝা যায়।
IVU টেস্ট কেন করা হয়?
কিডনি এবং মূত্রনালীর বিভিন্ন সমস্যা নির্ণয় করার জন্য IVU টেস্ট করা হয়ে থাকে। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ উল্লেখ করা হলো:
-
কিডনিতে পাথর (Kidney Stones): IVU টেস্টের মাধ্যমে কিডনিতে পাথর আছে কিনা এবং থাকলে তার আকার ও অবস্থান জানা যায়।
-
মূত্রনালীর ব্লকেজ (Ureteral Obstruction): মূত্রনালীতে কোনো ব্লকেজ থাকলে, তা IVU টেস্টের মাধ্যমে ধরা পড়ে। টিউমার, সংক্রমণ বা অন্য কোনো কারণে এই ব্লকেজ হতে পারে।
-
কিডনির টিউমার (Kidney Tumors): IVU টেস্ট কিডনির টিউমার শনাক্ত করতে সাহায্য করে।
-
জন্মগত ত্রুটি (Congenital Anomalies): কিডনি বা মূত্রনালীর জন্মগত কোনো ত্রুটি থাকলে, তা এই পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়।
-
সংক্রমণ (Infections): বারবার ইউরিন ইনফেকশন (Urine Infection) হওয়ার কারণ জানতে IVU টেস্ট করা হয়।
-
প্রস্রাবের সাথে রক্ত (Blood in Urine): প্রস্রাবের সাথে রক্ত গেলে, তার কারণ নির্ণয় করার জন্য এই পরীক্ষা করা হয়।
-
কিডনির আঘাত (Kidney Injury): কোনো দুর্ঘটনার কারণে কিডনিতে আঘাত লাগলে, তার অবস্থা জানার জন্য IVU টেস্ট করা হয়।
IVU টেস্টের আগে প্রস্তুতি
IVU টেস্টের আগে কিছু প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। এই প্রস্তুতিগুলো পরীক্ষাটিকে আরও নির্ভুল করতে এবং রোগীর জন্য নিরাপদ করতে সাহায্য করে। নিচে এই প্রস্তুতিগুলো আলোচনা করা হলো:
ডাক্তারের পরামর্শ
IVU টেস্ট করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। আপনার শারীরিক অবস্থা, অ্যালার্জি এবং অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে, তা ডাক্তারকে জানাতে হবে। এছাড়া, আপনি যদি অন্য কোনো ওষুধ গ্রহণ করেন, সে বিষয়েও ডাক্তারকে অবগত করা জরুরি।
অ্যালার্জি পরীক্ষা
IVU টেস্টের জন্য যে ডাই ব্যবহার করা হয়, তাতে কিছু মানুষের অ্যালার্জি হতে পারে। তাই, পরীক্ষার আগে ডাইয়ের প্রতি আপনার কোনো অ্যালার্জি আছে কিনা, তা জানার জন্য একটি ছোট টেস্ট করা হয়। যদি অ্যালার্জি থাকে, তাহলে ডাক্তার বিকল্প কোনো পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন।
খাবার এবং পানীয়
সাধারণত, IVU টেস্টের আগের দিন রাতে হালকা খাবার খেতে বলা হয়। পরীক্ষার আগের রাতে মধ্যরাতের পর থেকে আর কিছু খেতে বা পান করতে নিষেধ করা হয়। তবে, কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তার বিশেষ ডায়েটের পরামর্শ দিতে পারেন।
ওষুধ
কিছু ওষুধ, যেমন – ডায়াবেটিসের ওষুধ (Metformin) IVU টেস্টের ফলাফলে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই, এই পরীক্ষা করার আগে ডাক্তারকে আপনার ওষুধের তালিকা সম্পর্কে জানাতে হবে। ডাক্তার প্রয়োজন মনে করলে, পরীক্ষার কয়েক দিন আগে থেকে কিছু ওষুধ বন্ধ রাখার পরামর্শ দিতে পারেন।
পোশাক
IVU টেস্টের দিন আরামদায়ক পোশাক পরা উচিত। ধাতব জিনিস, যেমন – গয়না, বেল্ট ইত্যাদি এড়িয়ে যাওয়া ভালো, কারণ এগুলো পরীক্ষার ফলাফলে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
অন্যান্য প্রস্তুতি
- পরীক্ষার আগে রোগীকে একটি সম্মতিপত্রে (consent form) স্বাক্ষর করতে হতে পারে।
- মহিলাদের ক্ষেত্রে, তারা গর্ভবতী কিনা, তা ডাক্তারকে জানানো জরুরি। কারণ গর্ভাবস্থায় এক্স-রে ক্ষতিকর হতে পারে।
- পরীক্ষার দিন একজন সঙ্গী থাকা ভালো, বিশেষ করে ডাই দেওয়ার পর কোনো অসুবিধা হলে তিনি সাহায্য করতে পারবেন।
IVU টেস্ট কীভাবে করা হয়? কিডনি পরীক্ষার প্রক্রিয়া
IVU টেস্ট একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যা কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়। নিচে এই ধাপগুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
পরীক্ষার শুরুতে
প্রথমে রোগীকে পরীক্ষার টেবিলে শোয়ানো হয়। এরপর একটি নার্স বা টেকনিশিয়ান রোগীর হাতে একটি ক্যানুলা (cannula) প্রবেশ করান। এই ক্যানুলার মাধ্যমেই ডাই বা কনট্রাস্ট মিডিয়া শরীরে প্রবেশ করানো হবে।
ডাই প্রবেশ করানো
ক্যানুলার মাধ্যমে ধীরে ধীরে ডাই প্রবেশ করানো হয়। ডাই প্রবেশ করার সাথে সাথে কিছু রোগীর শরীরে সামান্য গরম লাগতে পারে বা ধাতব স্বাদ অনুভব হতে পারে। এটি স্বাভাবিক, তবে কোনো অসুবিধা হলে সঙ্গে সঙ্গে নার্সকে জানাতে হবে।
এক্স-রে ছবি তোলা
ডাই প্রবেশ করানোর পর নির্দিষ্ট সময় পরপর এক্স-রে ছবি তোলা হয়। সাধারণত, প্রথম ছবিটি ডাই দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তোলা হয়। এরপর ৫, ১০, ১৫ এবং ২০ মিনিট পর আরও কিছু ছবি তোলা হয়। এই সময়ের ব্যবধানে ডাই কিডনি, মূত্রনালী ও মূত্রাশয়ের মধ্যে দিয়ে যায় এবং ছবিগুলোতে কিডনির বিভিন্ন অংশ স্পষ্টভাবে দেখা যায়।
প্রস্রাব করার পর ছবি
শেষ ধাপে রোগীকে প্রস্রাব করতে বলা হয় এবং প্রস্রাব করার পর মূত্রাশয়ের একটি ছবি নেওয়া হয়। এই ছবিটি মূত্রাশয় খালি হওয়ার পর তার অবস্থা জানতে সাহায্য করে।
পরীক্ষার সময়কাল
IVU টেস্ট সাধারণত ৩০ থেকে ৬০ মিনিট সময় লাগে। তবে, কিছু ক্ষেত্রে আরও বেশি সময় লাগতে পারে।
এখানে একটি টেবিলের মাধ্যমে IVU টেস্টের সময়কাল এবং ছবি তোলার সময়গুলো দেখানো হলো:
| ধাপ | সময় |
|---|---|
| ডাই প্রবেশ করানো | ২-৩ মিনিট |
| প্রথম ছবি | ডাই দেওয়ার সাথে সাথে |
| দ্বিতীয় ছবি | ৫ মিনিট পর |
| তৃতীয় ছবি | ১০ মিনিট পর |
| চতুর্থ ছবি | ১৫ মিনিট পর |
| পঞ্চম ছবি | ২০ মিনিট পর |
| প্রস্রাব করার পর শেষ ছবি | প্রস্রাব করার পর তাৎক্ষণিক |
IVU টেস্টের পর করণীয়
IVU টেস্টের পর কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি। নিচে এই বিষয়গুলো আলোচনা করা হলো:
-
পর্যবেক্ষণ: পরীক্ষার পর রোগীকে কিছু সময় (সাধারণত ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা) ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে থাকতে হয়। এই সময়ে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে, সঙ্গে সঙ্গে তার চিকিৎসা করা হয়।
-
প্রচুর জল পান করা: IVU টেস্টের পর প্রচুর পরিমাণে জল পান করা উচিত। এর ফলে ডাই দ্রুত শরীর থেকে বেরিয়ে যায় এবং কিডনির উপর চাপ কম পড়ে।
-
খাবার: পরীক্ষার পর স্বাভাবিক খাবার খাওয়া যেতে পারে। তবে, সহজে হজম হয় এমন খাবার খাওয়া ভালো।
-
ওষুধ: যদি পরীক্ষার আগে কোনো ওষুধ বন্ধ রাখতে বলা হয়ে থাকে, তাহলে ডাক্তার পুনরায় সেই ওষুধ শুরু করার পরামর্শ দিতে পারেন।
-
শারীরিক কার্যকলাপ: IVU টেস্টের পর সাধারণত কোনো শারীরিক বিধিনিষেধ থাকে না। তবে, দুর্বল লাগলে বা মাথা ঘুরলে বিশ্রাম নিতে হবে।
-
ফলাফল: IVU টেস্টের ফলাফল পেতে সাধারণত কয়েক দিন সময় লাগে। রিপোর্ট পাওয়ার পর ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
IVU টেস্টের ঝুঁকি এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
IVU টেস্ট সাধারণত নিরাপদ, তবে কিছু ঝুঁকি এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। নিচে এগুলো আলোচনা করা হলো:
-
অ্যালার্জি: ডাইয়ের কারণে অ্যালার্জি হতে পারে। অ্যালার্জির লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে – ত্বক লাল হয়ে যাওয়া, চুলকানি, শ্বাসকষ্ট, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া। গুরুতর ক্ষেত্রে অ্যানাফিল্যাক্সিস (anaphylaxis) হতে পারে, যা একটি জীবন-হুমকি স্বরূপ অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া।
-
কিডনির সমস্যা: যাদের আগে থেকে কিডনির সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রে IVU টেস্টের পর কিডনির কার্যকারিতা আরও খারাপ হতে পারে।
-
সংক্রমণ: ক্যানুলা প্রবেশ করানোর স্থানে সংক্রমণ হওয়ার সামান্য ঝুঁকি থাকে।
-
এক্স-রে বিকিরণ: IVU টেস্টে এক্স-রে ব্যবহার করা হয়, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তবে, এই পরীক্ষার সময় বিকিরণের মাত্রা খুবই কম থাকে।
-
অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু রোগীর ক্ষেত্রে মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, শরীরে অস্বস্তি বা ইঞ্জেকশন দেওয়ার স্থানে ব্যথা হতে পারে।
যদি IVU টেস্টের পর কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
IVU টেস্টের বিকল্প
কিছু ক্ষেত্রে IVU টেস্টের পরিবর্তে অন্য পরীক্ষাও করা যেতে পারে। নিচে কয়েকটি বিকল্প পরীক্ষা উল্লেখ করা হলো:
-
আলট্রাসনোগ্রাফি (Ultrasonography): এটি একটি নিরাপদ এবং ব্যথাহীন পরীক্ষা, যা কিডনি এবং মূত্রনালীর ছবি তৈরি করতে শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করে।
-
সিটি স্ক্যান (CT Scan): সিটি স্ক্যান IVU টেস্টের চেয়ে আরও বিস্তারিত ছবি দিতে পারে। এটি কিডনি, মূত্রনালী এবং আশেপাশের অন্যান্য অঙ্গের ত্রিমাত্রিক ছবি তৈরি করতে সক্ষম।
-
এমআরআই (MRI): এমআরআই একটি শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র এবং রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে শরীরের অঙ্গগুলোর ছবি তৈরি করে। এটি কিডনি এবং মূত্রনালীর সমস্যা নির্ণয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
-
রেনাল স্ক্যান (Renal Scan): এই পরীক্ষায় তেজস্ক্রিয় পদার্থ ব্যবহার করে কিডনির কার্যকারিতা মূল্যায়ন করা হয়।
ডাক্তার আপনার শারীরিক অবস্থা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক পরীক্ষা নির্বাচন করবেন।
IVU টেস্ট খরচ
IVU টেস্টের খরচ বিভিন্ন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত, এই পরীক্ষার খরচ ২,০০০ থেকে ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। তবে, কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে বা উন্নত মানের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে খরচ আরও বেশি হতে পারে।
IVU টেস্টের খরচ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানার জন্য আপনার নিকটবর্তী হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যোগাযোগ করতে পারেন।
IVU টেস্ট নিয়ে কিছু সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ)
IVU টেস্ট নিয়ে অনেকের মনে বিভিন্ন প্রশ্ন থাকে। নিচে কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো:
IVU টেস্ট কি ক্ষতিকর?
IVU টেস্ট সাধারণত নিরাপদ, তবে কিছু ঝুঁকি থাকে, যেমন – অ্যালার্জি এবং কিডনির সমস্যা। তবে, এই ঝুঁকিগুলো কম এবং ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে থাকলে সহজেই মোকাবিলা করা যায়।
IVU টেস্ট করতে কতক্ষণ লাগে?
IVU টেস্ট সাধারণত ৩০ থেকে ৬০ মিনিট সময় লাগে। তবে, কিছু ক্ষেত্রে বেশি সময় লাগতে পারে।
IVU টেস্টের আগে কি খাওয়া নিষেধ?
সাধারণত, IVU টেস্টের আগের রাতে মধ্যরাতের পর থেকে কিছু খেতে বা পান করতে নিষেধ করা হয়।
IVU টেস্টের পর কি বিশ্রাম নিতে হয়?
IVU টেস্টের পর সাধারণত বিশ্রামের প্রয়োজন হয় না। তবে, দুর্বল লাগলে বা মাথা ঘুরলে বিশ্রাম নেওয়া উচিত।
IVU টেস্টের বিকল্প কি কি?
IVU টেস্টের বিকল্প হিসেবে আলট্রাসনোগ্রাফি, সিটি স্ক্যান, এমআরআই এবং রেনাল স্ক্যান করা যেতে পারে।
IVU এবং সিটি স্ক্যান এর মধ্যে পার্থক্য কী?
IVU (Intravenous Urography) হল একটি বিশেষ ধরনের এক্স-রে পরীক্ষা, যেখানে ডাই ব্যবহার করে কিডনি, মূত্রনালী ও মূত্রাশয়ের ছবি নেওয়া হয়। অন্যদিকে, সিটি স্ক্যান (Computed Tomography Scan) একটি উন্নত ইমেজিং পদ্ধতি, যা এক্স-রে ব্যবহার করে শরীরের ভেতরের অঙ্গগুলোর বিস্তারিত ত্রিমাত্রিক ছবি তৈরি করে। IVU মূলত কিডনি এবং মূত্রনালীর সমস্যা নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয়, যেখানে সিটি স্ক্যান শরীরের অন্যান্য অঙ্গের সমস্যাও নির্ণয় করতে পারে। সিটি স্ক্যানে সাধারণত IVU-এর চেয়ে বেশি রেডিয়েশন ব্যবহার করা হয় এবং এটি আরও বেশি সময়সাপেক্ষ হতে পারে।
IVU করার আগে কি কি খাবার নিষেধ?
IVU করার আগে সাধারণত কঠিন খাবার এবং গ্যাস তৈরি করতে পারে এমন খাবার নিষেধ করা হয়। পরীক্ষার আগের দিন রাতে হালকা খাবার খেতে বলা হয় এবং মধ্যরাতের পর থেকে কিছু খেতে বা পান করতে নিষেধ করা হয়। এর কারণ হল, পরীক্ষার সময় পেটে গ্যাস থাকলে ছবি তোলার ক্ষেত্রে অসুবিধা হতে পারে এবং পরীক্ষার ফলাফল অস্পষ্ট হতে পারে। এছাড়া, পরীক্ষার আগে প্রচুর পরিমাণে জল পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়, যাতে কিডনি ভালোভাবে পরিষ্কার হয় এবং ডাই ভালোভাবে কাজ করতে পারে।
IVU টেস্টের মাধ্যমে কি ক্যান্সার ধরা পরে?
IVU (Intravenous Urography) টেস্ট মূলত কিডনি, মূত্রনালী (ureter) এবং মূত্রাশয়ের (urinary bladder) গঠন এবং কার্যকারিতা মূল্যায়নের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি পাথর, ব্লকেজ, সংক্রমণ এবং অন্যান্য অস্বাভাবিকতা সনাক্ত করতে সহায়ক, তবে এটি ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য সরাসরি ডিজাইন করা হয়নি।
IVU টেস্টের মাধ্যমে কিডনি, মূত্রনালী বা মূত্রাশয়ে কোনো টিউমার বা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি সন্দেহ হলে, ডাক্তার আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য অতিরিক্ত পরীক্ষা যেমন সিটি স্ক্যান (CT scan), এমআরআই (MRI), বা বায়োপসি (biopsy) করার পরামর্শ দিতে পারেন। ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য এই পরীক্ষাগুলো আরও বেশি সংবেদনশীল এবং নির্দিষ্ট তথ্য সরবরাহ করতে পারে।
IVU টেস্ট ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ সনাক্ত করতে সহায়ক হতে পারে, তবে ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য এটি একটি সম্পূর্ণ পরীক্ষা নয়।
শেষ কথা
IVU টেস্ট কিডনি এবং মূত্রনালীর বিভিন্ন সমস্যা নির্ণয়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। এই পরীক্ষার মাধ্যমে কিডনির কার্যকারিতা এবং গঠন সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়। IVU টেস্টের আগে সঠিক প্রস্তুতি নেওয়া এবং পরীক্ষার পর ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা জরুরি।
যদি আপনার কিডনি সংক্রান্ত কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী IVU টেস্ট করান। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন!
