ক্যান্সার টেস্টের নাম: সম্পূর্ণ তালিকা

ক্যান্সার টেস্টের নাম: সম্পূর্ণ তালিকা

ক্যানসার… নামটা শুনলেই যেন বুকের ভেতরটা কেঁপে ওঠে, তাই না? কিন্তু সত্যি বলতে কী, ক্যানসার মানেই শেষ নয়। বরং আগেভাগে রোগটা ধরতে পারলে, সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ জীবনযাপন করা সম্ভব। আর ক্যানসারকে গোড়াতেই ধরতে গেলে দরকার কিছু জরুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা। আজ আমরা কথা বলব সেইসব ক্যান্সার টেস্ট নিয়ে, যা রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করে।

ক্যান্সার একটি জটিল রোগ। এর প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায়ই কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। তাই, নিয়মিত স্ক্রিনিং এবং ডায়াগনস্টিক টেস্ট করানো রোগ নির্ণয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ব্লগ পোস্টে, আমরা বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সার টেস্ট এবং তাদের ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা (Essential Tests for Cancer Diagnosis)

ক্যানসার নির্ণয়ের জন্য অনেক ধরনের পরীক্ষা রয়েছে। আপনার জন্য কোন পরীক্ষাটি প্রযোজ্য, তা আপনার শারীরিক অবস্থা, রোগের লক্ষণ এবং পূর্ববর্তী স্বাস্থ্য রিপোর্টের ওপর নির্ভর করে। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার তালিকা দেওয়া হলো:

রক্ত পরীক্ষা (Blood Tests)

রক্ত পরীক্ষা ক্যানসার নির্ণয়ের প্রথম ধাপ হতে পারে। রক্তের বিভিন্ন উপাদান, যেমন রক্ত কণিকা, প্রোটিন এবং অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থের মাত্রা দেখে ক্যানসারের উপস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট (Complete Blood Count – CBC)

সিবিসি (CBC) পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তের শ্বেত রক্ত কণিকা (White Blood Cells), লোহিত রক্ত কণিকা (Red Blood Cells) এবং প্লেটলেট (Platelets) এর সংখ্যা নির্ণয় করা হয়। এই সংখ্যাগুলোর অস্বাভাবিকতা ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, লিউকেমিয়া (Leukemia) বা লিম্ফোমার (Lymphoma) মতো ব্লাড ক্যানসারে শ্বেত রক্ত কণিকার সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়।

টিউমার মার্কার টেস্ট (Tumor Marker Tests)

টিউমার মার্কার হলো কিছু প্রোটিন বা অন্যান্য পদার্থ, যা ক্যানসার কোষ দ্বারা তৈরি হয় অথবা শরীরের অন্যান্য কোষ ক্যানসারের প্রতিক্রিয়ায় তৈরি করে। টিউমার মার্কার টেস্টের মাধ্যমে রক্তে এই মার্কারগুলোর মাত্রা পরিমাপ করা হয়। কিছু পরিচিত টিউমার মার্কার হলো:

  • সিএ (CA) ১৫-৩: স্তন ক্যানসারের (Breast Cancer) জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • সিএ (CA) ১২৫: ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের (Ovarian Cancer) জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • পিএসএ (PSA): প্রোস্টেট ক্যানসারের (Prostate Cancer) জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • সিইএ (CEA): কোলন (Colon) ও অন্যান্য ক্যানসারের জন্য ব্যবহৃত হয়।

তবে, টিউমার মার্কারের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া মানেই ক্যানসার হয়েছে, এমনটা নয়। অন্যান্য কারণেও এই মার্কারগুলোর মাত্রা বাড়তে পারে। তাই, এই টেস্টের ফলাফল অন্যান্য পরীক্ষার সাথে মিলিয়ে দেখতে হয়।

ইমেজিং টেস্ট (Imaging Tests)

ইমেজিং টেস্টগুলো শরীরের ভেতরের অঙ্গ ও টিস্যুর ছবি তৈরি করতে সাহায্য করে। এই ছবিগুলো দেখে ক্যানসারের অবস্থান, আকার এবং বিস্তার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইমেজিং টেস্ট নিচে উল্লেখ করা হলো:

এক্স-রে (X-ray)

এক্স-রে একটি সাধারণ এবং বহুল ব্যবহৃত ইমেজিং পদ্ধতি। এটি হাড়ের ক্যানসার (Bone Cancer) এবং ফুসফুসের ক্যানসার (Lung Cancer) নির্ণয়ে বিশেষভাবে উপযোগী।

সিটি স্ক্যান (CT Scan)

সিটি স্ক্যান (CT Scan) হলো একটি উন্নত ইমেজিং পদ্ধতি, যেখানে এক্স-রে ব্যবহার করে শরীরের ভেতরের অঙ্গগুলোর ত্রিমাত্রিক (3D) ছবি তৈরি করা হয়। এটি ক্যানসারের আকার, অবস্থান এবং বিস্তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারে।

এমআরআই (MRI)

এমআরআই (MRI) হলো শক্তিশালী চুম্বক এবং রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে শরীরের ভেতরের অঙ্গ ও টিস্যুর ছবি তৈরি করার পদ্ধতি। এটি মস্তিষ্কের ক্যানসার (Brain Cancer), স্পাইনাল কর্ডের ক্যানসার (Spinal Cord Cancer) এবং নরম টিস্যুর ক্যানসার (Soft Tissue Cancer) নির্ণয়ে অত্যন্ত উপযোগী।

আলট্রাসাউন্ড (Ultrasound)

আলট্রাসাউন্ড (Ultrasound) শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করে শরীরের ভেতরের অঙ্গের ছবি তৈরি করে। এটি লিভার (Liver), কিডনি (Kidney), এবং অন্যান্য পেটের অঙ্গের ক্যানসার নির্ণয়ে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া, গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য আলট্রাসাউন্ড একটি নিরাপদ পদ্ধতি।

পজিট্রন এমিশন টমোগ্রাফি (Positron Emission Tomography – PET Scan)

পিইটি স্ক্যান (PET Scan) একটি উন্নত ইমেজিং পদ্ধতি, যা শরীরের কোষগুলোর কার্যকলাপ (Metabolic Activity) দেখতে সাহায্য করে। এটি ক্যানসার কোষগুলো কতটা সক্রিয়, তা জানতে বিশেষভাবে উপযোগী। প্রায়শই সিটি স্ক্যানের সাথে মিলিয়ে পিইটি স্ক্যান করা হয়, যা পিইটি-সিটি স্ক্যান (PET-CT Scan) নামে পরিচিত।

বায়োপসি (Biopsy)

বায়োপসি হলো ক্যানসার নির্ণয়ের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে, সন্দেহজনক স্থান থেকে টিস্যু বা কোষের নমুনা সংগ্রহ করে মাইক্রোস্কোপের নিচে পরীক্ষা করা হয়। বায়োপসির মাধ্যমে ক্যানসারের ধরন, গ্রেড (Grade) এবং স্টেজ (Stage) সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। বিভিন্ন ধরনের বায়োপসি পদ্ধতি রয়েছে, যা নিচে উল্লেখ করা হলো:

ইনসিশনাল বায়োপসি (Incisional Biopsy)

এই পদ্ধতিতে, টিউমারের একটি ছোট অংশ কেটে নেওয়া হয়। এটি সাধারণত ত্বকের ক্যানসার (Skin Cancer) বা নরম টিস্যুর ক্যানসার নির্ণয়ের জন্য করা হয়।

এক্সসিশনাল বায়োপসি (Excisional Biopsy)

এই পদ্ধতিতে, পুরো টিউমারটি কেটে নেওয়া হয়। ছোট আকারের টিউমারের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা হয়, যেখানে টিউমারটি সহজেই অপসারণ করা যায়।

কোর নিডেল বায়োপসি (Core Needle Biopsy)

এই পদ্ধতিতে, একটি সরু নিডেলের মাধ্যমে টিস্যুর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এটি লিভার, ফুসফুস বা অন্য কোনো অঙ্গের ক্যানসার নির্ণয়ে ব্যবহার করা হয়।

ফাইন নিডেল এসপিরেশন (Fine Needle Aspiration – FNA)

এই পদ্ধতিতে, খুব সরু একটি নিডেল ব্যবহার করে কোষের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এটি থাইরয়েড (Thyroid) বা লিম্ফ নোডের (Lymph Node) ক্যানসার নির্ণয়ে ব্যবহার করা হয়।

বোন ম্যারো বায়োপসি (Bone Marrow Biopsy)

এই পদ্ধতিতে, হাড়ের মজ্জা থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এটি লিউকেমিয়া (Leukemia) বা লিম্ফোমার (Lymphoma) মতো ব্লাড ক্যানসার নির্ণয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

জেনেটিক টেস্টিং (Genetic Testing)

জেনেটিক টেস্টিংয়ের মাধ্যমে ক্যানসারের ঝুঁকি মূল্যায়ন করা যায় এবং কিছু ক্ষেত্রে ক্যানসারের চিকিৎসায় সাহায্য করে। এই পরীক্ষাগুলো সাধারণত নিম্নলিখিত উপায়ে করা হয়:

জার্মলাইন টেস্টিং (Germline Testing)

এই পরীক্ষা বংশগতভাবে প্রাপ্ত জিন মিউটেশন (Gene Mutation) সনাক্ত করে। এটি সাধারণত তাদের জন্য সুপারিশ করা হয় যাদের পরিবারে ক্যানসারের ইতিহাস আছে। স্তন ক্যানসার, ডিম্বাশয়ের ক্যানসার এবং কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি মূল্যায়ন করতে এই পরীক্ষা সহায়ক।

সোমাটিক টেস্টিং (Somatic Testing)

এই পরীক্ষা ক্যানসার কোষের মধ্যেকার জিনগত পরিবর্তন সনাক্ত করে। এটি ক্যানসারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ নির্বাচন করতে সহায়ক।

অন্যান্য বিশেষ পরীক্ষা (Other Specialized Tests)

উপরে উল্লেখিত পরীক্ষাগুলো ছাড়াও, ক্যানসার নির্ণয়ের জন্য আরও কিছু বিশেষ পরীক্ষা রয়েছে। এগুলো সাধারণত নির্দিষ্ট ধরনের ক্যানসার নির্ণয়ে ব্যবহার করা হয়।

এন্ডোস্কোপি (Endoscopy)

এন্ডোস্কোপি একটি পদ্ধতি, যেখানে একটি সরু, নমনীয় টিউবের মাথায় ক্যামেরা লাগিয়ে শরীরের ভেতরের অঙ্গ পরীক্ষা করা হয়। টিউবটি মুখ, নাক অথবা অন্য কোনো ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করানো হয়।

  • কলোনোস্কোপি (Colonoscopy): কোলন বা বৃহদান্ত্রের ক্যানসার নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয়।
  • গ্যাস্ট্রোস্কোপি (Gastroscopy): খাদ্যনালী ও পাকস্থলীর ক্যানসার নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয়।
  • ব্রঙ্কোস্কোপি (Bronchoscopy): ফুসফুসের ক্যানসার নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয়।
  • ** সিস্টোস্কোপি (Cystoscopy):** মূত্রথলির ক্যানসার নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয়।

ল্যাপারোস্কোপি (Laparoscopy)

ল্যাপারোস্কোপি একটি সার্জিক্যাল পদ্ধতি, যেখানে পেটে ছোট ছোট ছিদ্র করে ক্যামেরা ও অন্যান্য surgical উপকরণ প্রবেশ করিয়ে ভেতরের অঙ্গ পরীক্ষা করা হয়। এটি ডিম্বাশয়ের ক্যানসার, লিভার ক্যানসার এবং প্যানক্রিয়াসের ক্যানসার নির্ণয়ে ব্যবহার করা হয়।

ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ের গুরুত্ব (Importance of Cancer Screening)

ক্যান্সার স্ক্রিনিং হলো সুস্থ মানুষের শরীরে ক্যানসারের উপস্থিতি আছে কিনা, তা পরীক্ষা করা। স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা সম্ভব হলে, চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্ক্রিনিং টেস্ট আলোচনা করা হলো:

স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং (Breast Cancer Screening)

  • ম্যামোগ্রাম (Mammogram): এটি স্তনের এক্স-রে, যা ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণগুলো (যেমন ছোট টিউমার বা অস্বাভাবিক পরিবর্তন) শনাক্ত করতে সাহায্য করে।
  • ক্লিনিক্যাল ব্রেস্ট পরীক্ষা (Clinical Breast Exam): একজন স্বাস্থ্যকর্মী স্তন manualmente পরীক্ষা করে কোনো অস্বাভাবিকতা আছে কিনা তা দেখেন।
  • সেলফ ব্রেস্ট পরীক্ষা (Self Breast Exam): মহিলারা নিজেরাই নিজেদের স্তন পরীক্ষা করে কোনো পরিবর্তন বা অস্বাভাবিকতা অনুভব করলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।

জরায়ু মুখের ক্যানসার স্ক্রিনিং (Cervical Cancer Screening)

  • প্যাপ টেস্ট (Pap Test): এই পরীক্ষায় জরায়ু মুখের কোষ সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়, যাতে কোনো অস্বাভাবিকতা বা ক্যানসারের পূর্ববর্তী অবস্থা শনাক্ত করা যায়।
  • এইচপিভি টেস্ট (HPV Test): এই পরীক্ষায় হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (Human Papillomavirus – HPV) এর উপস্থিতি পরীক্ষা করা হয়, যা জরায়ু মুখের ক্যানসারের প্রধান কারণ।

কোলন ক্যানসার স্ক্রিনিং (Colon Cancer Screening)

  • কলোনোস্কোপি (Colonoscopy): এই পরীক্ষায় একটি নমনীয় টিউবের মাথায় ক্যামেরা লাগিয়ে পুরো কোলন পরীক্ষা করা হয়, যাতে পলিপ (Polyp) বা ক্যানসারের অন্য কোনো লক্ষণ দেখা যায় কিনা।
  • সিগময়ডোসকপি (Sigmoidoscopy): এই পরীক্ষায় কলোনোস্কোপির মতো একটি টিউব ব্যবহার করে কোলনের নিম্নাংশ পরীক্ষা করা হয়।
  • মল পরীক্ষা (Stool Test): মলের মধ্যে রক্ত বা ডিএনএ (DNA) এর অস্বাভাবিকতা পরীক্ষা করা হয়, যা ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে।

প্রোস্টেট ক্যানসার স্ক্রিনিং (Prostate Cancer Screening)

  • পিএসএ টেস্ট (PSA Test): রক্তের পিএসএ (Prostate-Specific Antigen) এর মাত্রা পরীক্ষা করা হয়। পিএসএ-এর উচ্চ মাত্রা প্রোস্টেট ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে।
  • ডিজিটাল রেক্টাল পরীক্ষা (Digital Rectal Exam – DRE): এই পরীক্ষায় ডাক্তার গ্লাভস পরে আঙুলের মাধ্যমে প্রোস্টেট গ্রন্থি পরীক্ষা করেন, যাতে কোনো অস্বাভাবিকতা অনুভব করা যায় কিনা।

ক্যান্সার টেস্টের খরচ (Cost of Cancer Tests)

ক্যান্সার টেস্টের খরচ বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভর করে, যেমন:

  • টেস্টের ধরন
  • হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার
  • শহরের location

সাধারণভাবে, রক্ত পরীক্ষার খরচ কয়েকশ থেকে কয়েক হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। ইমেজিং টেস্ট, যেমন এক্স-রে, সিটি স্ক্যান, এমআরআই, এবং পিইটি স্ক্যানের খরচ কয়েক হাজার থেকে শুরু করে কয়েক লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। বায়োপসির খরচও কয়েক হাজার থেকে লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে, যা নির্ভর করে বায়োপসির ধরনের ওপর। জেনেটিক টেস্টিংয়ের খরচ সাধারণত বেশি হয়ে থাকে।

ক্যান্সার থেকে বাঁচতে কিছু টিপস (Tips to Prevent Cancer)

ক্যানসার একটি মারাত্মক রোগ, তবে কিছু নিয়ম মেনে চললে এর ঝুঁকি কমানো যায়। নিচে কিছু টিপস দেওয়া হলো:

  • ধূমপান পরিহার করুন: ধূমপান ফুসফুস, মুখ, গলা, কিডনি, মূত্রথলি এবং অন্যান্য অঙ্গের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন: ফল, সবজি এবং শস্য জাতীয় খাবার বেশি খান। প্রক্রিয়াজাত খাবার (Processed Food) এবং চিনি যুক্ত খাবার কম খান।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করুন: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিটের জন্য ব্যায়াম করুন।
  • নিয়মিত স্ক্রিনিং করান: বয়স ও লিঙ্গ অনুযায়ী ক্যানসারের স্ক্রিনিং করানো জরুরি।
  • টিকা নিন: হেপাটাইটিস বি (Hepatitis B) এবং হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (HPV) এর টিকা লিভার ও জরায়ু মুখের ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়।
  • স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন: অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।

কিছু সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQs)

এখানে ক্যানসার পরীক্ষা নিয়ে কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো:

ক্যান্সার নির্ণয়ে কোন পরীক্ষাটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ?

বায়োপসি (Biopsy) হলো ক্যানসার নির্ণয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। এর মাধ্যমে ক্যানসারের ধরন ও স্টেজ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।

ক্যান্সার স্ক্রিনিং কখন শুরু করা উচিত?

ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ের সময়সীমা ব্যক্তি ও ক্যানসারের ধরনের ওপর নির্ভর করে। সাধারণত, স্তন ক্যানসারের জন্য ৪০ বছর বয়স থেকে ম্যামোগ্রাম (Mammogram), জরায়ু মুখের ক্যানসারের জন্য ২১ বছর বয়স থেকে প্যাপ টেস্ট (Pap Test), এবং কোলন ক্যানসারের জন্য ৪৫ বছর বয়স থেকে কলোনোস্কোপি (Colonoscopy) করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

টিউমার মার্কার কি সবসময় ক্যানসারের উপস্থিতি নির্দেশ করে?

টিউমার মার্কারের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া মানেই ক্যানসার হয়েছে, এমনটা নয়। অন্যান্য কারণেও এই মার্কারগুলোর মাত্রা বাড়তে পারে। তাই, এই টেস্টের ফলাফল অন্যান্য পরীক্ষার সাথে মিলিয়ে দেখতে হয়।

জেনেটিক টেস্টিং কি সবার জন্য জরুরি?

জেনেটিক টেস্টিং সাধারণত তাদের জন্য জরুরি যাদের পরিবারে ক্যানসারের ইতিহাস আছে। এটি ক্যানসারের ঝুঁকি মূল্যায়ন করতে এবং ব্যক্তিগত চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করতে সহায়ক।

ক্যান্সার সনাক্ত হওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ কী হওয়া উচিত?

ক্যান্সার সনাক্ত হওয়ার পর দ্রুত একজন ক্যানসার বিশেষজ্ঞের (Oncologist) পরামর্শ নেওয়া উচিত। তিনি আপনার ক্যানসারের ধরন, স্টেজ এবং শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে সঠিক চিকিৎসার পরিকল্পনা দেবেন।

উপসংহার (Conclusion)

ক্যানসার একটি ভীতিকর রোগ হলেও, সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় এবং উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ জীবনযাপন করা সম্ভব। তাই, ক্যানসারের লক্ষণ দেখা দিলে বা ঝুঁকি থাকলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষাগুলো করান। নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে ক্যানসারকে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করে জীবন বাঁচানো সম্ভব। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *