ইকো টেস্ট কেন করা হয়: হৃদপিণ্ড পরীক্ষা

হৃদপিণ্ড পরীক্ষা: ইকো টেস্ট কেন করা হয়?

আচ্ছা, বুকে একটু চাপ লাগছে? সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গেলে হাঁপিয়ে যাচ্ছেন? কিংবা ডাক্তারবাবু হয়তো আপনার হৃদপিণ্ডের একটা ইকো টেস্ট করাতে বলেছেন? তাহলে আজকের লেখাটা আপনার জন্য! ইকো টেস্ট (Echocardiogram) নিয়ে অনেকের মনেই নানা প্রশ্ন থাকে। এটা কী, কেন করা হয়, কিভাবে করা হয় – এই সব কিছু নিয়েই আমরা আলোচনা করব।

ইকো টেস্ট কী? হৃদয়ের প্রতিচ্ছবি

সহজ ভাষায় বলতে গেলে, ইকো টেস্ট হল আপনার হৃদপিণ্ডের একটা আলট্রাসাউন্ড। অনেকটা প্রেগন্যান্সির সময় যেমন পেটের আলট্রাসাউন্ড করা হয়, তেমনই। তবে এখানে দেখা হয় আপনার হার্ট বা হৃদপিণ্ডটা কেমন আছে, তার ভালভগুলো ঠিকঠাক কাজ করছে কিনা, রক্তের পাম্পিং কেমন হচ্ছে – এই সব কিছু।

ইকো টেস্ট কেন করা হয়? কারণগুলো জেনে নিন

হৃদরোগের বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করার জন্য ইকো টেস্ট করা হয়। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ উল্লেখ করা হলো:

  • হার্টের ভালভের সমস্যা: আপনার হার্টে চারটি ভালভ আছে – মিট্রাল, ট্রিকাসপিড, পালমোনারি ও অ্যাওর্টিক ভালভ। এই ভালভগুলো যদি ঠিকমতো না খোলে বা বন্ধ না হয়, তাহলে রক্ত চলাচলে সমস্যা হতে পারে। ইকো টেস্টের মাধ্যমে এই সমস্যাগুলো ধরা পড়ে।

  • হার্ট ফেইলিউর: হার্ট ফেইলিউর মানে হল আপনার হৃদপিণ্ড শরীরের চাহিদা অনুযায়ী রক্ত পাম্প করতে পারছে না। ইকো টেস্টের মাধ্যমে দেখা যায় আপনার হার্টের পাম্পিং ক্ষমতা কতটা কমে গেছে।

  • জন্মগত হৃদরোগ: কিছু মানুষ জন্ম থেকেই হৃদরোগ নিয়ে জন্মায়। ইকো টেস্টের মাধ্যমে শিশুদের এবং বড়দের জন্মগত হৃদরোগ নির্ণয় করা যায়।

  • হার্টের আকার বৃদ্ধি: উচ্চ রক্তচাপ বা অন্য কোনো কারণে যদি হার্টের আকার বড় হয়ে যায়, তাহলে ইকো টেস্টে সেটা ধরা পড়ে।

  • হার্টের পেশীর রোগ (কার্ডিওমায়োপ্যাথি): এই রোগে হার্টের পেশী দুর্বল হয়ে যায়। ইকো টেস্টের মাধ্যমে এই রোগের তীব্রতা বোঝা যায়।

  • রক্ত জমাট বাঁধা: হার্টের মধ্যে রক্ত জমাট বেঁধে গেলে ইকো টেস্টে সেটা দেখা যায়।

  • হার্টের টিউমার: যদিও এটা খুবই বিরল, তবে হার্টে টিউমার হলে ইকো টেস্টে ধরা পড়তে পারে।

ইকো টেস্ট কত প্রকার ও কী কী?

ইকো টেস্ট বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে, আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী ডাক্তারবাবু একটি বেছে নেবেন। নিচে কয়েকটি প্রধান ধরনের ইকো টেস্ট নিয়ে আলোচনা করা হলো:

2D ইকো (২D Echocardiogram)

এটি সবচেয়ে সাধারণ ইকো টেস্ট। এই পরীক্ষায় হৃদপিণ্ডের একটি দ্বিমাত্রিক ছবি পাওয়া যায়। হার্টের গঠন, ভালভের অবস্থা এবং পাম্পিং ক্ষমতা দেখার জন্য এটি ব্যবহার করা হয়।

ডপলার ইকো (Doppler Echocardiogram)

ডপলার ইকো রক্তের গতিবিধি পরিমাপ করে। এর মাধ্যমে বোঝা যায় ভালভগুলোর মধ্যে দিয়ে রক্ত ঠিকমতো প্রবাহিত হচ্ছে কিনা। যদি কোনো ভালভে লিকেজ থাকে বা ভালভ সরু হয়ে যায়, তাহলে ডপলার ইকোতে ধরা পড়ে।

কালার ডপলার (Color Doppler)

এটি ডপলার ইকো-র একটি উন্নত সংস্করণ। কালার ডপলার রক্তের প্রবাহের দিক এবং গতি রং দিয়ে চিহ্নিত করে, যা সমস্যাগুলো সহজে বুঝতে সাহায্য করে।

স্ট্রেস ইকো (Stress Echocardiogram)

এই পরীক্ষাটি সাধারণত করা হয় যখন আপনি ব্যায়াম করছেন অথবা ট্রেডমিলে হাঁটছেন। যদি ব্যায়ামের সময় আপনার বুকে ব্যথা হয় বা শ্বাসকষ্ট হয়, তাহলে স্ট্রেস ইকো করার পরামর্শ দেওয়া হয়। ব্যায়ামের সময় হার্টের কার্যকারিতা পরিবর্তিত হলে সেটা এই পরীক্ষায় ধরা পড়ে। যাদের করোনারি আর্টারি ডিজিজ আছে, তাদের জন্য এই পরীক্ষাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।

ট্রান্স esোফেজিয়াল ইকো (Transesophageal Echocardiogram – TEE)

এই পরীক্ষায় একটি ছোট ট্রান্সডিউসার খাদ্যনালীর মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করানো হয়। যেহেতু খাদ্যনালী হার্টের খুব কাছে অবস্থিত, তাই এই পরীক্ষায় হার্টের আরও স্পষ্ট ছবি পাওয়া যায়। ভালভের সমস্যা, রক্ত জমাট বাঁধা বা হার্টের পেছনের অংশের ছবি দেখার জন্য TEE খুব উপযোগী।

কন্ট্রাস্ট ইকো (Contrast Echocardiogram)

এই পরীক্ষায় স্যালাইন বা অন্য কোনো তরল আপনার রক্তে প্রবেশ করানো হয়, যা আলট্রাসাউন্ড ইমেজের মান উন্নত করে। যাদের ইকো পরীক্ষায় ছবি স্পষ্ট আসে না, তাদের জন্য কন্ট্রাস্ট ইকো ব্যবহার করা হয়।

ইকো টেস্ট করার নিয়ম

ইকো টেস্ট করার আগে কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। সাধারণত, এই পরীক্ষার জন্য বিশেষ কোনো প্রস্তুতির প্রয়োজন হয় না। তবে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি:

  • ডাক্তারকে আপনার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য দিন। আপনি যদি কোনো ওষুধ খান বা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা থাকে, তবে তা আগে থেকেই ডাক্তারকে জানান।

  • পরীক্ষার আগে চা বা কফি পান করা থেকে বিরত থাকুন, কারণ ক্যাফিন হার্টবিট বাড়িয়ে দিতে পারে।

  • যদি স্ট্রেস ইকো করা হয়, তাহলে ব্যায়াম করার জন্য আরামদায়ক পোশাক পরুন এবং হাঁটার জন্য উপযুক্ত জুতো নিন।

  • ট্রান্স esোফেজিয়াল ইকো (TEE) করার আগে অন্তত ৬ ঘণ্টা কিছু খাবেন না।

ইকো টেস্ট কিভাবে করা হয়? পদ্ধতি জেনে নিন

ইকো টেস্ট করার পদ্ধতি খুবই সহজ এবং সাধারণত এতে কোনো ব্যথা লাগে না। নিচে ধাপগুলো উল্লেখ করা হলো:

  1. প্রথমে আপনাকে একটি টেবিলের উপর শুতে বলা হবে।
  2. আপনার বুকের কিছু অংশে জেল লাগানো হবে। এই জেল আলট্রাসাউন্ড তরঙ্গকে ভালোভাবে চলাচল করতে সাহায্য করে।
  3. এরপর, একজন টেকনিশিয়ান একটি ট্রান্সডিউসার (ছোট্ট যন্ত্র) আপনার বুকের উপর ধরে বিভিন্ন দিক থেকে ছবি তুলবেন।
  4. ডপলার ইকো করার সময়, টেকনিশিয়ান রক্তের গতি পরিমাপ করার জন্য ট্রান্সডিউসার ব্যবহার করবেন।
  5. স্ট্রেস ইকো করার সময়, আপনাকে ট্রেডমিলে হাঁটতে বা ব্যায়াম করতে বলা হবে, এবং একই সাথে আপনার হার্টের ছবি তোলা হবে।
  6. ট্রান্স esোফেজিয়াল ইকো (TEE)-এর ক্ষেত্রে, আপনার গলাLocally administered injections of botulinum toxins are widely used to treat spasmodic dysphonia. Localized injections of botulinum toxin into the vocal cords are used to treat spasmodic dysphonia, a rare neurological voice disorder characterized by involuntary spasms of the vocal cords muscles. The toxin causes a temporary weakening of the injected muscles, reducing the frequency and severity of spasms and improving voice quality. Injections are typically administered by an ENT specialist or a laryngologist using electromyography or laryngeal endoscopy to guide the injection. The effects of botulinum toxin injections typically last for 3-6 months, after which repeat injections are necessary to maintain optimal voice control. অবশ করার জন্য স্প্রে করা হতে পারে এবং তারপর খাদ্যনালীর মধ্যে দিয়ে ট্রান্সডিউসার প্রবেশ করানো হবে।

পুরো প্রক্রিয়াটি সাধারণত ২০ থেকে ৩০ মিনিট সময় নেয়। TEE-এর ক্ষেত্রে একটু বেশি সময় লাগতে পারে।

ইকো টেস্টের ফলাফল

ইকো টেস্টের ফলাফল সাধারণত কয়েক দিনের মধ্যেই পাওয়া যায়। আপনার ডাক্তারবাবু ফলাফলের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেবেন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসার পরামর্শ দেবেন। ফলাফলে যদি কোনো অস্বাভাবিকতা ধরা পড়ে, তাহলে তিনি আরও কিছু পরীক্ষা বা চিকিৎসার সুপারিশ করতে পারেন।

ইকো টেস্টের সুবিধা ও অসুবিধা

যেকোনো পরীক্ষার মতোই, ইকো টেস্টেরও কিছু সুবিধা ও অসুবিধা আছে। নিচে সেগুলো আলোচনা করা হলো:

সুবিধা

  • এটি একটি ব্যথাহীন পরীক্ষা।
  • কোনো রেডিয়েশন ব্যবহার করা হয় না।
  • হার্টের গঠন এবং কার্যকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়।
  • বিভিন্ন ধরনের হৃদরোগ নির্ণয় করা যায়।

অসুবিধা

  • মোটা শরীর বা ফুসফুসের সমস্যার কারণে ছবি অস্পষ্ট হতে পারে।
  • স্ট্রেস ইকো করার সময় বুকে ব্যথা বা শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
  • ট্রান্স esোফেজিয়াল ইকো (TEE)-এর ক্ষেত্রে সামান্য অস্বস্তি হতে পারে।

ইকো টেস্টের খরচ

ইকো টেস্টের খরচ বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং হাসপাতালের উপর নির্ভর করে। সাধারণত, ২D ইকো-র খরচ ১৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। ডপলার এবং কালার ডপলারের খরচ ২০০০ থেকে ৪০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। স্ট্রেস ইকো এবং TEE-এর খরচ আরও বেশি হতে পারে।

কিছু জরুরি প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ)

ইকো টেস্ট নিয়ে আপনাদের মনে আরও কিছু প্রশ্ন থাকতে পারে। নিচে কয়েকটি সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো:

ইকো টেস্ট কি খালি পেটে করতে হয়?

সাধারণ ইকো টেস্টের জন্য খালি পেটে থাকার প্রয়োজন নেই। তবে, যদি ট্রান্স esোফেজিয়াল ইকো (TEE) করা হয়, তাহলে অন্তত ৬ ঘণ্টা আগে থেকে কিছু না খাওয়াই ভালো।

ইকো করলে কি রোগ ধরা পড়ে?

হ্যাঁ, ইকো টেস্টের মাধ্যমে হৃদরোগের অনেক সমস্যা ধরা পড়ে, যেমন ভালভের সমস্যা, হার্ট ফেইলিউর, জন্মগত হৃদরোগ, ইত্যাদি।

ইকো টেস্ট কতক্ষণ লাগে?

সাধারণ ইকো টেস্ট ২০ থেকে ৩০ মিনিট সময় নেয়। স্ট্রেস ইকো এবং TEE-এর ক্ষেত্রে একটু বেশি সময় লাগতে পারে।

ইকো টেস্টের আগে কি কি খাওয়া নিষেধ?

ইকো টেস্টের আগে চা, কফি বা অন্য কোনো ক্যাফিনযুক্ত পানীয় পান করা উচিত নয়। TEE-এর ক্ষেত্রে পরীক্ষার অন্তত ৬ ঘণ্টা আগে থেকে কিছু খাওয়া নিষেধ।

ইকো টেস্ট কি ক্ষতিকর?

না, ইকো টেস্ট ক্ষতিকর নয়। এটি একটি নিরাপদ এবং ব্যথাহীন পরীক্ষা।

ইকো টেস্টের রিপোর্ট কেমন হয়?

ইকো টেস্টের রিপোর্টে আপনার হার্টের আকার, গঠন, ভালভের কার্যকারিতা এবং পাম্পিং ক্ষমতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া থাকে। ডাক্তারবাবু এই রিপোর্ট দেখে আপনার রোগের অবস্থা বুঝতে পারেন।

কাদের ইকো টেস্ট করানো উচিত?

যাদের বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, দুর্বলতা বা হৃদরোগের অন্য কোনো লক্ষণ আছে, তাদের ইকো টেস্ট করানো উচিত। এছাড়াও, যাদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা হৃদরোগের পারিবারিক ইতিহাস আছে, তাদেরও নিয়মিত ইকো টেস্ট করানো প্রয়োজন।

শিশুদের ইকো টেস্ট কখন প্রয়োজন হয়?

শিশুদের জন্মগত হৃদরোগ থাকলে বা অন্য কোনো হৃদরোগের লক্ষণ দেখা গেলে ইকো টেস্ট করানো প্রয়োজন হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় ইকো টেস্ট করা কি নিরাপদ?

হ্যাঁ, গর্ভাবস্থায় ইকো টেস্ট করা নিরাপদ। কারণ, এই পরীক্ষায় কোনো রেডিয়েশন ব্যবহার করা হয় না।

ইকো টেস্ট কি হৃদরোগের একমাত্র নির্ণায়ক পরীক্ষা?

না, ইকো টেস্ট হৃদরোগ নির্ণয়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা, তবে এটি একমাত্র নির্ণায়ক নয়। রোগের সম্পূর্ণ চিত্র পাওয়ার জন্য ডাক্তারবাবু আরও কিছু পরীক্ষা যেমন ইসিজি, বুকের এক্স-রে বা রক্ত পরীক্ষা করাতে পারেন।

শেষ কথা

আপনার হৃদয়ের স্বাস্থ্য আপনার জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই, কোনো রকম ঝুঁকি না নিয়ে সময় মতো ইকো টেস্ট করান এবং হৃদরোগ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখুন। সুস্থ থাকুন, সুন্দর থাকুন! যদি আপনার হৃদরোগ সংক্রান্ত কোনো ঝুঁকি থাকে, তাহলে অবশ্যই একজন কার্ডিওলজিস্টের পরামর্শ নিন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *