ইউরিন টেস্ট কেন করা হয়: স্বাস্থ্য নির্ণয়
জীবনযাত্রার নানা বাঁকে, শরীর জানান দেয় অনেক না বলা কথা। আর সেই কথাগুলো বুঝতে আমাদের সাহায্য করে কিছু পরীক্ষা। তাদের মধ্যে অন্যতম হল ইউরিন টেস্ট। কিন্তু, ইউরিন টেস্ট কেন করা হয় (Urine Test Keno Kora Hoy) বা মূত্র পরীক্ষা কেন করা হয়, তা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে। আসুন, আজকের ব্লগ পোস্টে আমরা সেই রহস্য উদঘাটন করি!
শরীরের ভেতরের খবর জানতে, রোগের আগাম বার্তা পেতে, অথবা স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে – ইউরিন টেস্টের ভূমিকা অনেক। তাই, এই পরীক্ষাটি সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা আমাদের সবার জন্য জরুরি।
ইউরিন টেস্ট কী এবং কেন?
ইউরিন টেস্ট, সহজ ভাষায় বললে, আপনার মূত্রের একটি পরীক্ষা। এই পরীক্ষার মাধ্যমে আপনার শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা যায়। কিডনি, লিভার, ইউরিনারি ট্র্যাক্ট এবং অন্যান্য অঙ্গের স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় এই পরীক্ষার মাধ্যমে।
ইউরিন টেস্টের প্রকারভেদ (Types of Urine Test)
ইউরিন টেস্ট বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে, এবং প্রত্যেকটির উদ্দেশ্য ভিন্ন। নিচে কয়েকটি প্রধান ইউরিন টেস্টের প্রকারভেদ আলোচনা করা হলো:
- রুটিন ইউরিনালিসিস: এটি সবচেয়ে সাধারণ ইউরিন টেস্ট। স্বাস্থ্য পরীক্ষার অংশ হিসেবে অথবা কোনো রোগের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা গেলে এই পরীক্ষা করা হয়। মূত্রের রং, ঘনত্ব, অম্লতা এবং কিছু বিশেষ উপাদানের (যেমন – প্রোটিন, গ্লুকোজ, শ্বেত রক্ত কণিকা) উপস্থিতি পরীক্ষা করা হয়।
- ইউরিন কালচার: মূত্রে ব্যাকটেরিয়া বা অন্য কোনো জীবাণুর সংক্রমণ আছে কিনা, তা জানার জন্য এই পরীক্ষা করা হয়। সংক্রমণ ধরা পড়লে, কোন অ্যান্টিবায়োটিক সেগুলোর ওপর কাজ করবে, সেটিও এই পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা যায়।
- ২৪ ঘণ্টার ইউরিন টেস্ট: এই পরীক্ষায় একটি নির্দিষ্ট সময়ের (সাধারণত ২৪ ঘণ্টা) মধ্যে সংগৃহীত মূত্রের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। কিডনি কতটা ভালোভাবে কাজ করছে, তা জানতে এই পরীক্ষাটি করা হয়। এছাড়া, কিছু বিশেষ হরমোন এবং প্রোটিনের মাত্রাও এই পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করা যায়।
ইউরিন টেস্টের প্রয়োজনীয়তা (Importance of Urine Test)
ইউরিন টেস্ট আমাদের শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করে। এটি রোগ নির্ণয় এবং স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণে কিভাবে সাহায্য করে, তা নিচে উল্লেখ করা হলো:
- রোগ নির্ণয়: ইউরিন টেস্টের মাধ্যমে ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, লিভারের সমস্যা এবং ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI) এর মতো রোগগুলো সহজে নির্ণয় করা যায়।
- স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ: নিয়মিত ইউরিন টেস্টের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের কার্যকারিতা নজরে রাখা যায়। কোনো সমস্যা শুরু হওয়ার আগেই সে বিষয়ে সতর্ক হওয়া যায়।
- গর্ভাবস্থা: গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ইউরিন টেস্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস (জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস) এবং প্রি-এক্লাম্পসিয়ার মতো জটিলতাগুলো শনাক্ত করতে সাহায্য করে।
ইউরিন টেস্ট কিভাবে করা হয়?
ইউরিন টেস্ট করার পদ্ধতিটি বেশ সহজ এবং সাধারণত ঝামেলাবিহীন। এখানে একটি সাধারণ নির্দেশিকা দেওয়া হলো:
নমুনা সংগ্রহের নিয়মাবলী (Collection Procedure)
- সঠিক পাত্র নির্বাচন: প্রথমে একটি পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত পাত্র ( sterile container) সংগ্রহ করুন। এই পাত্রটি আপনি যেকোনো প্যাথলজি ল্যাব অথবা ডাক্তারের কাছ থেকে পেতে পারেন।
- হাত পরিষ্কার করুন: নমুনা সংগ্রহের আগে আপনার হাত ভালো করে সাবান এবং জল দিয়ে ধুয়ে নিন। এটি নিশ্চিত করবে যে আপনার হাতের জীবাণু মূত্রের নমুনায় মিশে যাচ্ছে না।
- মধ্যবর্তী মূত্র সংগ্রহ: প্রথমে সামান্য পরিমাণ মূত্র ত্যাগ করুন টয়লেটে। এরপর, মাঝের অংশের মূত্র সরাসরি পাত্রে সংগ্রহ করুন। শেষের দিকের মূত্র আর সংগ্রহ করার প্রয়োজন নেই। এই পদ্ধতিকে "clean-catch" পদ্ধতি বলা হয়।
- পাত্রটি ভালোভাবে বন্ধ করুন: নমুনা সংগ্রহের পর পাত্রের মুখ ভালোভাবে বন্ধ করুন, যাতে কোনো জীবাণু প্রবেশ করতে না পারে।
- দ্রুত জমা দিন: সংগৃহীত নমুনাটি যত দ্রুত সম্ভব ল্যাবে জমা দিন। যদি तुरंत জমা দিতে না পারেন, তবে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করতে পারেন।
টেস্টের জন্য প্রস্তুতি (Preparation for the Test)
ইউরিন টেস্টের আগে কিছু বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে, যা পরীক্ষার ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে। নিচে কয়েকটি সাধারণ নির্দেশিকা দেওয়া হলো:
- ডাক্তারের পরামর্শ: আপনার ডাক্তারকে আপনার স্বাস্থ্য এবং ওষুধ সম্পর্কে বিস্তারিত জানান। কিছু ওষুধ ইউরিন টেস্টের ফলাফল পরিবর্তন করতে পারে।
- ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট: যদি আপনি কোনো ভিটামিন বা সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করেন, তবে সে বিষয়ে ডাক্তারকে অবহিত করুন। কিছু সাপ্লিমেন্ট মূত্রের রং পরিবর্তন করতে পারে।
- খাদ্য ও পানীয়: সাধারণত ইউরিন টেস্টের আগে বিশেষ কোনো খাবার বা পানীয় পরিহার করার প্রয়োজন হয় না। তবে, ডাক্তারের বিশেষ কোনো নির্দেশনা থাকলে তা অবশ্যই মেনে চলুন।
- মাসিক চক্র: মহিলাদের ক্ষেত্রে, মাসিক চলাকালীন ইউরিন টেস্ট করা উচিত নয়। যদি জরুরি হয়, তবে ডাক্তারকে জানিয়ে পরীক্ষা করাতে হবে।
ইউরিন টেস্টের ফলাফল এবং ব্যাখ্যা
ইউরিন টেস্টের ফলাফল হাতে পাওয়ার পর, সেটি বোঝা এবং ব্যাখ্যা করা খুবই জরুরি। এই ফলাফল আপনার শরীরের ভেতরের অবস্থা সম্পর্কে অনেক তথ্য দিতে পারে।
ফলাফলের সাধারণ উপাদান (Common Components of Results)
ইউরিন টেস্টের রিপোর্টে সাধারণত নিম্নলিখিত উপাদানগুলো থাকে:
- রং এবং স্বচ্ছতা: স্বাভাবিক মূত্রের রং হালকা হলুদ হয়ে থাকে। যদি রং গাঢ় হলুদ, লালচে বা অন্য কোনো অস্বাভাবিক রং হয়, তবে তা কোনো স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে। মূত্রের স্বচ্ছতা ঘোলাটে হলে সংক্রমণ বা অন্যান্য সমস্যার সম্ভাবনা থাকে।
- আপেক্ষিক গুরুত্ব (Specific Gravity): এটি মূত্রের ঘনত্ব নির্দেশ করে। স্বাভাবিক মাত্রা হলো ১.০০২ থেকে ১.০৩০। এই মাত্রা কম বা বেশি হলে কিডনির কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ হতে পারে।
- পিএইচ (pH): এটি মূত্রের অম্লতা বা ক্ষারত্ব নির্দেশ করে। স্বাভাবিক মাত্রা ৪.৫ থেকে ৮ এর মধ্যে থাকে। অস্বাভাবিক pH মান কিডনি বা ইউরিনারি ট্র্যাক্টের সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
- প্রোটিন: সাধারণত মূত্রে প্রোটিন থাকার কথা নয়। যদি প্রোটিন পাওয়া যায়, তবে তা কিডনি রোগের লক্ষণ হতে পারে।
- গ্লুকোজ: মূত্রে গ্লুকোজের উপস্থিতি ডায়াবেটিসের ইঙ্গিত দেয়। তবে, গর্ভাবস্থায় বা কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতেও গ্লুকোজ পাওয়া যেতে পারে।
- শ্বেত রক্ত কণিকা (White Blood Cells): মূত্রে শ্বেত রক্ত কণিকার উপস্থিতি সংক্রমণ নির্দেশ করে। এটি ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI) এর একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
- লোহিত রক্ত কণিকা (Red Blood Cells): মূত্রে লোহিত রক্ত কণিকা পাওয়া গেলে কিডনি রোগ, সংক্রমণ বা আঘাতের কারণে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
- নাইট্রাইট: মূত্রে নাইট্রাইটের উপস্থিতি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ইঙ্গিত দেয়।
- কিটোন: শরীরে পর্যাপ্ত ইনসুলিন না থাকলে অথবা দীর্ঘ সময় ধরে উপোস থাকলে মূত্রে কিটোন পাওয়া যেতে পারে। এটি ডায়াবেটিস বা অন্য কোনো বিপাকীয় সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
ফলাফল কিভাবে বুঝবেন? (How to Understand the Results?)
ইউরিন টেস্টের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর, নিজে থেকে ফলাফল বোঝার চেষ্টা না করাই ভালো। কারণ, প্রতিটি উপাদানের স্বাভাবিক মাত্রা এবং আপনার ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরিস্থিতি বিবেচনা করে একজন ডাক্তার সবচেয়ে ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারবেন।
- ডাক্তারের পরামর্শ নিন: আপনার ইউরিন টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তারের কাছে যান। তিনি আপনার শারীরিক অবস্থা এবং অন্যান্য পরীক্ষার ফলাফলের সাথে মিলিয়ে রিপোর্টটি ব্যাখ্যা করবেন।
- প্রশ্ন করুন: রিপোর্টের কোনো অংশ বুঝতে অসুবিধা হলে ডাক্তারকে প্রশ্ন করুন। আপনার স্বাস্থ্য নিয়ে যেকোনো দ্বিধা দূর করা জরুরি।
- চিকিৎসা পরিকল্পনা: যদি রিপোর্টে কোনো অস্বাভাবিকতা ধরা পড়ে, তবে ডাক্তার আপনাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের পরামর্শ দেবেন।
অস্বাভাবিক ফলাফল এবং সম্ভাব্য কারণ (Abnormal Results and Potential Causes)
ইউরিন টেস্টের ফলাফলে কিছু অস্বাভাবিকতা দেখা গেলে তা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে। নিচে কয়েকটি সাধারণ অস্বাভাবিক ফলাফল এবং তাদের সম্ভাব্য কারণ আলোচনা করা হলো:
- প্রোটিনuria (মূত্রে প্রোটিন):
- কারণ: কিডনি রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, গর্ভাবস্থা, সংক্রমণ।
- গ্লুকোজuria (মূত্রে গ্লুকোজ):
- কারণ: ডায়াবেটিস, গর্ভাবস্থা, কিডনি রোগ।
- হিমাটুরিয়া (মূত্রে রক্ত):
- কারণ: কিডনি রোগ, ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI), কিডনি পাথর, আঘাত, টিউমার।
- পাইউরিয়া (মূত্রে শ্বেত রক্ত কণিকা):
- কারণ: ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI), কিডনি সংক্রমণ, প্রোস্টাটাইটিস।
- উচ্চ কিটোন মাত্রা:
- কারণ: ডায়াবেটিস, দীর্ঘ সময় ধরে উপোস, অ্যালকোহল সেবন, গুরুতর অসুস্থতা।
কখন ইউরিন টেস্ট করা উচিত?
ইউরিন টেস্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা, যা আমাদের শরীরের অনেক তথ্য দিতে পারে। কিন্তু, কখন এই পরীক্ষাটি করানো উচিত, তা জানা আমাদের জন্য জরুরি। কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ ও পরিস্থিতিতে ইউরিন টেস্ট করানো প্রয়োজন হতে পারে।
সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষার অংশ হিসেবে (As Part of General Health Checkup)
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার অংশ হিসেবে ইউরিন টেস্ট করানো একটি ভালো অভ্যাস। এটি রোগের প্রাথমিক লক্ষণ শনাক্ত করতে সাহায্য করে, এমনকি যখন কোনো দৃশ্যমান উপসর্গ থাকে না।
- বার্ষিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা: সুস্থ থাকার জন্য বছরে একবার ইউরিন টেস্ট করানো উচিত। এটি আপনার কিডনি, লিভার এবং অন্যান্য অঙ্গের স্বাস্থ্য সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারণা দেয়।
- ঝুঁকি মূল্যায়ন: যদি আপনার ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা কিডনি রোগের পারিবারিক ইতিহাস থাকে, তবে নিয়মিত ইউরিন টেস্ট করানো বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
নির্দিষ্ট লক্ষণ দেখা গেলে (When Specific Symptoms Appear)
কিছু বিশেষ লক্ষণ দেখা গেলে দ্রুত ইউরিন টেস্ট করানো উচিত। এই লক্ষণগুলো শরীরের কোনো সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে, যা ইউরিন টেস্টের মাধ্যমে নির্ণয় করা সম্ভব।
- প্রস্রাবে পরিবর্তন: প্রস্রাবের রং, গন্ধ বা পরিমাণে কোনো পরিবর্তন দেখা গেলে ইউরিন টেস্ট করানো উচিত। ঘোলাটে প্রস্রাব, দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব বা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বা কম প্রস্রাব হওয়া উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
- প্রস্রাবে ব্যথা বা জ্বালাপোড়া: প্রস্রাব করার সময় ব্যথা বা জ্বালাপোড়া করা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI) এর লক্ষণ হতে পারে। এক্ষেত্রে দ্রুত ইউরিন টেস্ট করে সংক্রমণ নির্ণয় করা জরুরি।
- কোমরে বা পেটে ব্যথা: ক্রমাগত কোমরে বা পেটে ব্যথা কিডনি সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। ইউরিন টেস্টের মাধ্যমে কিডনি রোগ বা পাথর আছে কিনা, তা জানা যেতে পারে।
- ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ: ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ, বিশেষ করে রাতে, ডায়াবেটিস বা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের লক্ষণ হতে পারে।
- পায়ে বা মুখমণ্ডলে ফোলা: কিডনি রোগ বা অন্যান্য সমস্যার কারণে শরীরে অতিরিক্ত তরল জমলে পায়ে বা মুখমণ্ডলে ফোলা দেখা দিতে পারে।
গর্ভাবস্থায় ইউরিন টেস্ট (Urine Test During Pregnancy)
গর্ভাবস্থায় ইউরিন টেস্ট একটি নিয়মিত অংশ। এটি মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- নিয়মিত পরীক্ষা: গর্ভাবস্থায় প্রতি ভিজিটে ইউরিন টেস্ট করানো হয়। এটি গর্ভকালীন ডায়াবেটিস (জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস), প্রি-এক্লাম্পসিয়া এবং ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI) এর মতো জটিলতাগুলো শনাক্ত করতে সাহায্য করে।
- প্রোটিন এবং গ্লুকোজ পরীক্ষা: গর্ভাবস্থায় ইউরিনে প্রোটিন বা গ্লুকোজের উপস্থিতি বিশেষভাবে নজরে রাখা হয়, কারণ এটি প্রি-এক্লাম্পসিয়া বা গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের লক্ষণ হতে পারে।
ইউরিন টেস্ট সম্পর্কিত কিছু সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর (FAQs)
ইউরিন টেস্ট নিয়ে আমাদের মনে অনেক প্রশ্ন জাগে। এখানে কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো, যা আপনাদের অনেক দ্বিধা দূর করতে সাহায্য করবে।
- ইউরিন টেস্টের আগে কি জল পান করা উচিত?
উত্তর: সাধারণত, ইউরিন টেস্টের আগে জল পান করা উচিত। পর্যাপ্ত জল পান করলে প্রস্রাব তৈরি হবে এবং নমুনা সংগ্রহ করতে সুবিধা হবে। তবে, কিছু বিশেষ পরীক্ষার ক্ষেত্রে ডাক্তার আপনাকে জল পান করতে নিষেধ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুসরণ করা উচিত। - ইউরিন টেস্টের খরচ কত?
উত্তর: ইউরিন টেস্টের খরচ সাধারণত ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। এটি নির্ভর করে আপনি কোন ধরনের পরীক্ষা করছেন এবং কোন ল্যাব থেকে করাচ্ছেন তার উপর। কিছু ল্যাবে প্যাকেজের মাধ্যমে ইউরিন টেস্ট করা হয়, যা খরচ কমাতে সাহায্য করতে পারে। - ফাস্ট মর্নিং ইউরিন স্যাম্পল কেন দিতে বলা হয়?
উত্তর: ফাস্ট মর্নিং ইউরিন স্যাম্পল (সকালের প্রথম প্রস্রাব) দিতে বলার কারণ হলো, এটি বেশি ঘনীভূত থাকে। রাতের বেলা প্রস্রাব না করার কারণে মূত্রের উপাদানগুলো ভালোভাবে বোঝা যায়। বিশেষ করে প্রোটিন, গ্লুকোজ এবং অন্যান্য রাসায়নিক উপাদানগুলো সহজে শনাক্ত করা যায়। - মহিলাদের পিরিয়ড চলাকালীন ইউরিন টেস্ট করা যায়?
উত্তর: মহিলাদের পিরিয়ড চলাকালীন ইউরিন টেস্ট না করাই ভালো। কারণ, এই সময় রক্তের কণা মূত্রের সঙ্গে মিশে যেতে পারে, যা পরীক্ষার ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে। যদি জরুরি হয়, তবে ডাক্তারকে জানিয়ে পরীক্ষা করাতে হবে এবং স্যাম্পল দেওয়ার সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। - ইউরিন ইনফেকশন (UTI) হলে কি ইউরিন টেস্টে ধরা পরে?
উত্তর: হ্যাঁ, ইউরিন ইনফেকশন (UTI) হলে ইউরিন টেস্টে ধরা পরে। ইউরিন টেস্টের মাধ্যমে মূত্রে শ্বেত রক্ত কণিকা (White Blood Cells) এবং ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি শনাক্ত করা যায়, যা UTI-এর প্রধান লক্ষণ। এছাড়া, ইউরিন কালচার পরীক্ষার মাধ্যমে কোন ধরনের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ঘটিয়েছে, সেটিও জানা যায় এবং সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক নির্বাচন করা যায়। - ডায়াবেটিস রোগীরা কেন ইউরিন টেস্ট করাবেন?
উত্তর: ডায়াবেটিস রোগীরা নিয়মিত ইউরিন টেস্ট করানোর মাধ্যমে তাদের কিডনির স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। ডায়াবেটিসের কারণে কিডনির কার্যকারিতা কমে যেতে পারে, যা প্রোটিনuria (মূত্রে প্রোটিন) এর মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়। এছাড়া, ইউরিনে গ্লুকোজের মাত্রাও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা, তা জানতে সাহায্য করে। - ইউরিন টেস্ট কি খালি পেটে করতে হয়?
উত্তর: সাধারণত ইউরিন টেস্ট খালি পেটে করতে হয় না। তবে, কিছু বিশেষ পরীক্ষার ক্ষেত্রে, যেমন ২৪ ঘণ্টার ইউরিন টেস্ট অথবা অন্য কোনো স্পেসিফিক পরীক্ষার জন্য ডাক্তার বিশেষ নির্দেশ দিতে পারেন। তাই, ইউরিন টেস্টের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
শেষ কথা
ইউরিন টেস্ট আমাদের শরীরের লুকানো অনেক সমস্যার সমাধান দিতে পারে। তাই, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার অংশ হিসেবে অথবা কোনো উপসর্গ দেখা গেলে দ্রুত ইউরিন টেস্ট করানো উচিত। আপনার স্বাস্থ্য আপনার হাতে, তাই সচেতন থাকুন এবং সুস্থ থাকুন।
